নাটোরের চামড়ার মোকামে বেচাকেনা কম

নাটোরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় চামড়ার মোকামের সামনে একটি ভ্যানে স্তূপ করে রাখা কোরবানির পশুর চামড়া | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি গুরুদাসপুর: নাটোরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় উত্তরাঞ্চলের কোরবানির পশুর চামড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম এখন বেচাকেনা জমে ওঠেনি। বিক্রেতা ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা না আসায় কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচাও খুব কম। বছরের পর বছর চামড়া বিক্রির টাকা বকেয়া পড়াসহ নানা কারণে লোকসান হওয়ায় এই মোকামের অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাঁদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

নাটোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, একসময় এই মোকামে ৩০০টি আড়ত ছিল। এখন কাগজে–কলমে ৬০–৭০টি থাকলেও বাস্তবে ২০–৩০টি আড়ত আছে। জেলার বিভিন্ন গ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে নগদ টাকায় তাঁদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু ট্যানারিমালিকদের কাছে তাঁদের বাকিতে চামড়া বিক্রি করতে হয়। এ কারণে বেশির ভাগ চামড়া ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ এই মোকাম থেকে দেশের চাহিদার ২০–২৫ শতাংশ চামড়ার জোগান দেওয়া হয়। এই মোকামে ঈদুল আজহাসহ সারা বছর ২০০ কোটির চামড়া কেনাবেচা হয়।

এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, ১০ বছর আগে চামড়া ব্যবসা করার জন্য একটি ব্যাংক থেকে দেড় কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। ঋণের ওই টাকা পরিশোধ করতে পারেননি এখনো। উপরন্তু সুদের টাকা শোধ করতে গিয়ে জায়গা–জমি সব বিক্রি করে দিতে হয়েছে তাঁকে। অথচ ট্যানারিমালিকদের কাছে ছয় কোটি টাকা পাবেন তিনি।

নাটোরের এই মোকামের আরেক ব্যবসায়ী রকিব উদ্দিন কমল জানান, ২০ বছর ধরে তিনি এ ব্যবসা করছেন। ট্যানারিমালিকদের কাছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ীদের। বকেয়া টাকা পেতে চামড়া ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করায় এই মোকামের ব্যবসায়ীদের ওপর ক্ষিপ্ত ট্যানারির মালিকেরা। এখন পুঁজি–সংকটের কারণে চামড়া ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।

মোকামের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজতকরণের অন্যতম উপাদান লবণের দাম লাগামহীন। প্রতিবস্তা লবণ ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিক খরচ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা লাগছে। অথচ প্রতিটি গরুর চামড়া আকার ও মানভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আজ বুধবার দুপুরে নাটোরের চামড়ার আড়তগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ আড়তই বন্ধ। ১০–১২টি আড়তে চামড়া স্তূপ করে রাখা হয়েছে। তবে কোনো বিক্রেতা বা মৌসুমি চামড়ার ব্যবসায়ীকে সেখানে পাওয়া যায়নি।

মোকামে চামড়ার মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বিক্রেতাদের না আসার কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন, দূরের উপজেলার ফড়িয়ারা চামড়া সংগ্রহ করে তাঁদের বাড়িতেই লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে রেখেছেন। তা ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের আরও ৩০-৩৫ জেলার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তাঁদের সংগৃহীত চামড়া নিয়ে আসবেন নাটোরের আড়তে। তখন আরও জমজমাট হয়ে উঠবে। এসব চামড়া আড়তে আনার পর ট্যানারির মালিকের প্রতিনিধিরা এসে চামড়ার মান দেখে দাম নির্ধারণ করে নিয়ে যাবেন। এ জন্য কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

এদিকে মোকামের আড়তের মালিকেরা প্রতিটি গরুর চামড়া মান ও আকারভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় ফড়িয়াদের কাছ থেকে কিনলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না গ্রামের সাধারণ মানুষ। কারণ, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা (ফড়িয়া) সর্বোচ্চ প্রতিটি চামড়ার দাম দিচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ছাগলের চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। পরিস্থিতি বুঝে স্থানীয় লোকজন বেশির ভাগ পশুর চামড়া এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করে দিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানি পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫-৪৮ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া ২০-২৫ টাকা ও বকরির চামড়া ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা জানান, এবার জেলায় ২ লাখ ৪৯ হাজার ৭৬১টি পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে গরু ৭৪ হাজার ১৭২টি, মহিষ ৯৮৭টি, ছাগল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯টি, ভেড়া ১১ হাজার ৫৮৫টি ও অন্যান্য ৮টি।