নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীবাসীর কাছে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা গণপরিবহন মেট্রোরেলে এখনই মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বসছে না। মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ধার্য করা ভ্যাট প্রত্যাহার করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, মেট্রোরেলের যাত্রীদের ওপর ভ্যাটের বোঝা শিগগিরই বসবে না—এমন ধারণা পেয়েছে তারা।
মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর বর্তমানে ভ্যাট মওকুফ আছে, যার সময়সীমা আজ রোববার, ৩০ জুন পর্যন্ত শেষ হওয়ার কথা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এই ভ্যাট মওকুফের সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে কিছু বলেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর ফলে আগামীকাল সোমবার, ১ জুলাই নতুন অর্থবছর থেকে মেট্রোরেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসার কথা।
ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। সংস্থাটির সূত্র বলছে, গত এপ্রিলেই মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে ডিএমটিসিএল। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে এনবিআর কোনো জবাব দেয়নি। তবে সরকারের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা করে ডিএমটিসিএল জানতে পেরেছে যে মেট্রোরেলের যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি স্থগিত বা মওকুফ করার বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় আছে। এ জন্য রোববার রাত পর্যন্ত ভ্যাট যুক্ত করে মেট্রোরেলের টিকিট বিক্রি করার কোনো প্রস্তুতিই নেয়নি ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক বলেন, মেট্রোরেলে কেন ভ্যাট প্রত্যাহার করা উচিত—এমন ১০-১৫টি কারণ উল্লেখ করে তাঁরা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠির জবাব এখনো পাওয়া যায়নি। এ জন্য ১ জুলাই থেকে ভ্যাট যুক্ত করে ভাড়া আদায়ের কোনো তৎপরতা তাঁদের নেই। তিনি মনে করেন, এনবিআরের কর্মকর্তারা বাজেট নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এখন ভ্যাটের বিষয়টি সুরাহা হবে।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়ার পর থেকেই মেট্রোরেলের টিকিট ভ্যাটমুক্ত রয়েছে। ২০২৩ সালের শুরু থেকে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট আরোপের উদ্যোগ নেয় এনবিআর। ওই বছরের ২২ জানুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার শওকত আলী ভ্যাট আরোপের আহ্বান জানিয়ে ডিএমটিসিএলকে চিঠি দেন।
পরে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এনবিআরের একাধিক বৈঠক হয়। ভ্যাট আরোপ থেকে এনবিআর শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসে। ২০২৩ সালের মে মাসে এনবিআর প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট মওকুফ থাকবে। অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ভ্যাট দিতে হবে।
এনবিআর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) ট্রেনের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রয়োগ করে থাকে।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, মেট্রোরেলকে সাধারণ ট্রেনের সঙ্গে তুলনা করা ঠিক হবে না। কারণ, এই ট্রেনের যাত্রীরা স্বল্প দূরত্বে যাতায়াত করেন। ফলে ভ্যাট যুক্ত করলে ভাড়া অনেক বেড়ে যাবে। এ ছাড়া মেট্রোরেলকে ‘শিশু’ উল্লেখ করে এর পথচলার শুরুতেই ভ্যাট আরোপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করে ডিএমটিসিএল। কারণ, ভ্যাট যাত্রীদের কাছ থেকেই আদায় করতে হবে। এতে ভাড়া বেড়ে যাবে। এমনিতেই মেট্রোরেলের ভাড়া আশপাশের দেশের তুলনায় বেশি বলে সমালোচনা আছে।