নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. তানভীর ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে সড়কে টায়ার জ্বালান নেতা-কর্মীরা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি আটঘরিয়া: পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. তানভীর ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে এনে আটঘরিয়া থানার ওসি অপসারণসহ বুধবার উপজেলায় বিকেল তিনটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত হরতাল পালনের ঘোষণাও দেন তাঁরা।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি আটঘরিয়া বাজার হয়ে থানার সামনে দিয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার বাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় টায়ার জ্বালিয়ে পাবনা-চাটমোহর সড়ক অবরোধ করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দেন।

সমাবেশে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. শহিদুল ইসলাম রতন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দেবোত্তর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোহাঈম্মীন হোসেন চঞ্চল ও নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তানভীর ইসলাম বক্তব্য দেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. শহিদুল ইসলাম রতন বলেন, ‘আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হাদিউল ইসলাম আটঘরিয়ার দাগি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ওঠা-বসা করেন। তার প্রত্যক্ষ মদদে কিছু সন্ত্রাসী আটঘরিয়ায় যা ইচ্ছে তাই করছেন। তাঁর পছন্দ না হলে তিনি কোনো মামলা নিতে চান না। ওসির সঙ্গেই সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে ঘোরে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেন না তিনি। এই ওসিকে আটঘরিয়ার মানুষ চায় না। তার অপসারণের দাবিতে আগামী বুধবার ৬ ঘণ্টার হরতাল পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দেবোত্তর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মোঈম্মীন হোসেন চঞ্চল বলেন, ‘হাদিউল ইসলাম ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই আটঘরিয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না, বরং সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে নিরীহ নেতা-কর্মীদের নামে হয়রানি করছেন। আমার উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও ওসি হাদিউল ইসলামের অপসারণ চাই।’

নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মো. তানভীর ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের দিন আমি বিভিন্ন কেন্দ্র কেন্দ্র ঘুরে নির্বাচন নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু আমাকে নির্বাচনের দিন প্রতিপক্ষের অফিস ভাঙচুরের আসামি করা হলো, তাও নির্বাচন পার হয়ে যাওয়ার ১০ দিন পর। আটঘরিয়ার চিহ্নিত সন্ত্রাসী জুয়েলের নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর এবং নেতা-কর্মীদের কুপিয়ে জখম করা হলো। তাঁরা এখনো হাসপাতালে ভর্তি। সেই জুয়েলের নামে যখন মামলা দেওয়া হলো তাঁকে গ্রেপ্তার না করে সেই জুয়েলের অভিযোগের ভিত্তিতে আমার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো। আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর ও নেতা-কর্মীদের কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার মামলাকে প্রভাবিত করতেই আমার নামে এই মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি একটি পক্ষের হয়ে কাজ করছেন।’ 

আটঘরিয়া উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. তানভীর ইসলামের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি হাদিউল ইসলাম বলেন, ‘আমার অপসারণের বিষয়টি তাদের রাজনৈতিক বিষয় হতে পারে। কেন তারা আমার অপসারণ চাচ্ছেন তার সুস্পষ্ট কারণ যদি উল্লেখ করতে পারেন তাহলে আমি আপনাদের সেই বিষয়ে বলতে পারব। আমি চেইন অফ কমান্ডে কাজ করি। তাই আমি বিশ্বাস করি, আমি যে কাজগুলো করেছি তার যথাযথ আইন দিকগুলো মেনেই করেছি। আমি কারও প্রভাবে প্রভাবিত নয়। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং আইন যেভাবে বলে আমি সেইভাবেই কাজ করি।’

গত ৩ জুন পাবনার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় বিজয়ী চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামের ৫ সমর্থককে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ উঠে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের আসবাবপত্র ও তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক জুয়েলসহ কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়ের পর গতকাল শনিবার প্রধান অভিযুক্ত জুয়েলের দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামসহ কয়েকজনের নামে নির্বাচনের দিন জুয়েলের কার্যালয় ভাঙচুরের মামলা দায়ের হয়।