দুঃখু মিয়ার স্বপ্নের স্কুল

নরসিংদীর পাঁচদোনার আলতাফ হোসেন। যিনি পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখেছেন দুটি হাত ছাড়াই। তবে হাত না থাকলেও হারতে রাজি হননি তিনি। পা দিয়ে লিখে ডিগ্রি পাস করেছেন। এখন তারই গড়া ‘প্রতিভা দুঃখু মিয়া কিন্ডার গার্টেন স্কুল’ ছড়াচ্ছে আলো। যেটিকে তিনি গড়ে তুলতে চান উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নরসিংদী সদরের পাঁচদোনা এলাকায় ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন আলতাফ হোসেন। তার জন্মের আগে বাবা-মার দুই সন্তান মারা যায়। এরপর তিনি হাতবিহীন জন্ম নিলে বাবা-মা নাম রাখেন দুঃখু মিয়া।

হাত না থাকলেও হারতে রাজি নন তিনি। প্রবল ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পায়ে লিখেই ১৯৮২ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৮৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ১৯৮৬ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি লাভ করেন।  

ডিগ্রি পাস করলেও দুই হাত না থাকায় সরকারি-বেসরকারি কোনও চাকরি পাননি আলতাফ; শুরু করেন প্রাইভেট টিউশনি। তাতে পরিবারের চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না। তখন থেকেই ভাবতে থাকেন বিকল্প কিছুর। 

দুঃখু মিয়ার চাকরি পেতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার শারীরিক প্রতিবন্ধিতা। চাকরির পেছনে দৌড়ে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি। তখন সিদ্ধান্ত নেন নিজেই কিছু করার।

২০০৭ সালে পৈত্রিক জমিতে দুঃখু মিয়া গড়ে তোলেন একটি স্কুল। নিজের নামে এর নাম দেন ‘প্রতিভা দুঃখু মিয়া কিন্ডার গার্টেন স্কুল’। এখন সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।

প্রতিদিন স্কুল শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যাসেম্বিলিতে পিটি-প্যারেড করেন পরিচালনা করেন দুঃখু মিয়া।

‘প্রতিভা দুঃখু মিয়া কিন্ডার গার্টেন স্কুল’ এর প্রতিটি শ্রেণিতেই নিয়মিত পাঠদান করেন দুঃখু মিয়া। পা দিয়েই তিনি ব্ল্যাক বোর্ডে লিখে থাকেন।

শ্রেণি কার্যক্রমে প্রতিটি কাজই তিনি পা দিয়েই করে থাকেন।

এমনকি দাপ্তরিক চিঠিপত্রও দুঃখু মিয়া লেখেন পা দিয়েই।

করোনাভাইরাস মহামারীর আগে দুঃখু মিয়ার স্কুলে ছাত্র সংখ্যা ছিল দুই শতাধিক। ওই সময় দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ এবং ওই এলাকায় কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে তার স্কুলে ছাত্র সংখ্যা কমে হয়েছে ১২০ জনের মত।

দুঃখু মিয়ার স্কুলে তিনি ছাড়াও বর্তমানে আরও ৯ জন শিক্ষক আছেন। তার ছেলে মোমিনুল ইসলাম স্কুল চালাতে তাকে সহযোগিতা করেন। তিনিও এই স্কুলের একজন শিক্ষক।

দুঃখু তার বেড়ে ওঠা, ডিগ্রি পাস পর্যন্ত নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া এবং স্কুল গড়ে তোলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

দুঃখু মিয়া তার দৈনন্দিন সব কাজ নিজে নিজেই করতে পারেন। খাওয়া-দাওয়াও তিনি করেন পায়ের সাহায্যেই।