বেনাপোলে ভারতগামী যাত্রীর চাপ, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভ্যাপসা গরমে নাভিশ্বাস

 

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতগামী যাত্রীদের তীব্র চাপ। শনিবার বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি যশোর: যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা দীপক কুমার রায় (৬৫) ক্যানসার আক্রান্ত স্ত্রীকে নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যান। কাগজপত্র যাচাই শেষে বেনাপোল-পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পার হতেই সাড়ে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে প্রচণ্ড গরমে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা।

শুধু দীপক রায় নন, চার দিন ধরে পাসপোর্টধারী কয়েক হাজার যাত্রী এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চার দিনে ২৪ হাজারের বেশি যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন। স্বাভাবিক সময়ে এ সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় হাজারের মধ্যে থাকে। তবে এবার রেকর্ডসংখ্যক যাত্রী যাতায়াত করেছেন, যাঁদের অধিকাংশই ঈদ ভ্রমণ ও চিকিৎসার জন্য ভারতে গমন করছেন। ঈদের সময়ে যাত্রীদের চাপ বৃদ্ধির বিষয়টি মাথায় রেখে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দ্রুত যাতে যাত্রীরা পাসপোর্টের কার্যক্রম শেষ করতে পারেন, সে জন্য সহযোগিতাও করা হচ্ছে।’

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেনাপোল ও পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পারাপার হতেই যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। বেনাপোল ইমিগ্রেশন পার হতে যে সময় লাগছে, তার দুই থেকে তিন গুণ বেশি সময় লাগছে পেট্রাপোল ইমিগ্রেশন পার হতে। ভ্যাপসা গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা।

ভারতে থাকা যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা দীপক রায় বলেন, 'ক্যানসার আক্রান্ত আমার স্ত্রীকে নিয়ে ১৩ জুন বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ভারতে এসেছি। বেনাপোলে দেড় ঘণ্টা ও পেট্রাপোলে পাঁচ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রচণ্ড গরমে আমি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম। মৃত্যুর উপক্রম হয়েছিল।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'মেডিকেল ভিসার রোগীদের জন্য আলাদা কোনো লাইন নেই। সাধারণের লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ মানুষ আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ইমিগ্রেশনে মানুষের সেবা বলে কিছু নেই। অথচ আমরা সব ধরনের ট্রাভেল চার্জ দিয়েই ভারতে আসি। এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।’

এ বিষয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ওসি আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বেনাপোলের এপারে রোগীদের জন্য আলাদা লাইন রয়েছে। ওপারের পেট্রাপোলের বিষয়ে বলতে পারব না। তবে পেট্রাপোলে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, এটা সত্য। এ বিষয়ে বেনাপোল-পেট্রাপোল সমন্বয় সভা ও কর্মশালায় যাত্রীদের এসব ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে।’

বেনাপোল চেকপোস্টে ইমিগ্রেশনে আজ দুপুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অপেক্ষা করছেন কয়েক হাজার পাসপোর্টধারী। যাত্রীদের লাইন ডেস্ক থেকে বারান্দা পেরিয়ে পৌঁছেছে ইমিগ্রেশন ভবনের বাইরের প্রধান সড়কে। প্রচণ্ড গরম আর রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে হাঁসফাঁস করছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে যাত্রীদের চাপে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ঈদে টানা পাঁচ দিনের সরকারি ছুটি পাওয়ায় ভারতে ভ্রমণকারী ও চিকিৎসাসেবা নিতে যাওয়া যাত্রীদের চাপ বেড়েছে বেনাপোল বন্দরে। তবে এখানে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

ভারতগামী একজন যাত্রী জানান, ঈদের ছুটিতে ভারতের দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাচ্ছেন। কিন্তু তিন ঘণ্টা প্রচণ্ড গরম আর রোদের মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ধীরগতিতে কাজ করায় দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে কখন ইমিগ্রেশন পার হব, বলতে পারছি না। যাত্রীদের দুর্ভোগ নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।