ট্রাকে করে কর্মস্থলে ফিরছেন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। শনিবার দুপুরে শেরপুরে ঢাকা বাস টার্মিনালে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি শেরপুর: বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি থেকে রক্ষায় ট্রাকের ওপর দেওয়া হয়েছে পলিথিনের ছাউনি। সেই ছাউনির নিচে অন্তত ৪০ জন নারী-পুরুষ। তাঁরা সবাই পোশাক কারখানার শ্রমিক। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা ঢাকা ও গাজীপুরে কর্মস্থলে ফিরছেন। শনিবার দুপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের শেরপুর উপজেলার ধুনট রোডে খাদ্যগুদামের পাশে এমন চিত্র দেখা যায়।

আলাপকালে বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, ধুনট রোডের পাশেই শেরপুরের ঢাকা বাস টার্মিনাল। এখানে দুই দিন ধরে ঘুরেও তাঁরা কর্মস্থলে ফেরার জন্য বাসের কোনো টিকিট পাননি। কারও আগামীকাল রোববার, আবার কারও সোমবার কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। এ জন্য ঝুঁকি থাকলেও বৃষ্টির মধ্যেই ট্রাকের ডালায় বসে কর্মস্থলে ফিরছেন। জনপ্রতি ভাড়া দিচ্ছেন ৪০০ টাকা। কারও কাছে মালপত্রে ভরা বস্তা থাকলে অতিরিক্ত ৪০ থেকে ৫০ টাকা গুনতে হচ্ছে।

ঢাকাগামী পোশাক কারখানার শ্রমিক আমজাদ হোসেন, সাইফুল ইসলাম, লিয়াকত আলী ও সাব্বির হোসেনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পোশাক কারখানায় শেরপুর, ধুনট, সারিয়াকান্দি ও নন্দীগ্রাম উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ চাকরি করেন। প্রতিবছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় বাড়ি ফেরা ও ঈদ–পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরা শ্রমিকেরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন। এবারও কোরবানির ঈদ শেষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা কর্মস্থলে ফিরছেন।

আজ দুপুরে শেরপুরে ঢাকা বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বাসের টিকিট কাউন্টারের সামনে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তারা টিকিটের জন্য এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ছুটছে। কাউন্টার থেকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কোনো টিকিট নেই। স্থানীয় সড়কে চলাচল করা অন্তত ৩০টি ছোট বাস টার্মিনালে দেখা গেল। যেসব বাস ঢাকায় যেতে প্রস্তুত। এসব বাসে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
বাস টার্মিনালে বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা শাজাহানপুর উপজেলার জামুন্না গ্রামের আয়েশা খাতুন বলেন, অন্তত তিন ঘণ্টা বসে আছেন টার্মিনালে। কিন্তু কর্মস্থলে ফেরার জন্য বাসের কোনো টিকিট পাচ্ছেন না।

নন্দীগ্রাম উপজেলার ঢাকুর গ্রামের নূরে আলম ও ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী গ্রামের চান মিয়া জানান, বাসের টিকিট না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকের ডালায় বসে কর্মস্থলে ফিরছেন।

বাস টার্মিনালে শ্যামলী পরিবহন, এসআর পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি কাউন্টার সূত্রে জানা যায়, যাঁরা আগে টিকিট কেটে রেখেছিলেন, শুধু তাঁরাই বাসে ঢাকা ফিরতে পারছেন। কোনো আসন ফাঁকা নেই। ফলে নতুন করে কোনো টিকিট বিক্রি হচ্ছে না।

হানিফ কাউন্টারের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান বলেন, শেরপুর বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিবছর পোশাক কারখানার ২৫ থেকে ৩০ হাজার শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রাকে করে কর্মস্থলে ফেরেন। বাস পরিবহন মালিকেরা যদি শ্রমিকদের বাসে করে পরিবহনের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে তাঁদের আর ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হতো না।

বগুড়া জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ পরিবহন মালিক সমিতির শেরপুর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা বলেন, শেরপুর থেকে ঢাকাগামী পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কর্মস্থলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য লোকাল রুট থেকে ৩০টি বাস দিয়েছেন। এসব বাসের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ভবিষ্যতে বাসের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।