রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল: নেতাকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের মারধর, পিস্তল ঠেকিয়ে ভীতি প্রদর্শন

ছাত্রদল নেতা নাফিউল ইসলাম জীবন। সোমবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে এক ছাত্রদল নেতা ও তাঁর বন্ধুকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর ও পিস্তল ঠেকিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

তবে আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছেন ওই ছাত্রলীগ নেতারা। তাঁরা বলছেন, ওই ছাত্রদল নেতা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করতে পারেন এমন সন্দেহ থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাঁকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি।

মারধরের শিকার দুজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাফিউল ইসলাম ওরফে জীবন ও তাঁর সহপাঠী বন্ধু ইউনুস খান। তাঁরা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, সহসভাপতি মনু মোহন (বাপ্পা), যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বদেশ শেখ, সাদিকুল ইসলাম (সাদিক), সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ হাসান (সোহাগ) ও মাদার বখ্শ হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মিশকাত হাসান।

ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেতা ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাত ৯টার দিকে নাফিউল ও তাঁর বন্ধু ইউনুস খান ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসেন। ক্যাম্পাস ঘুরে একপর্যায়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলের সামনে দাঁড়ালে বুঝতে পারেন, ছাত্রলীগের তিন নেতা তাঁদের অনুসরণ করছেন। তখন তাঁরা তাঁদের মোটরসাইকেলে রোকেয়া হলের পেছন দিয়ে ফ্লাইওভার–সংলগ্ন গেট দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার চেষ্টা করেন। ওই সময় ছাত্রলীগ নেতারা তাঁদেরকে পথরোধে আটক করেন। এরপর তাঁদেরকে জোর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের ২১৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে আসেন। কক্ষটিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব থাকেন।

এর কিছুক্ষণ পর সেই কক্ষে আসেন গালিব ও অভিযুক্ত অন্য ছাত্রলীগ নেতারা। কক্ষে এসে নাফিউলকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তাঁরা। জিজ্ঞাসাবাদে নাফিউল ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আছেন বলে স্বীকার করলে তাঁকে মারধর শুরু করেন গালিব। একপর্যায়ে পিস্তল দেখিয়ে নাফিউলকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তিনি। এ সময় নাফিউলের বন্ধু ইউনুস নিজে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানালে তাঁকেও চড়থাপ্পড় মারেন গালিব। খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে দিবাগত রাত একটার দিকে ওই দুজনকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে তুলে দেন ছাত্রলীগ নেতারা।

এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা নাফিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গালিব আমাকে প্রায় তিন ঘণ্টার মতো আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এ সময় গালিব তাঁর কাছে থাকা একটি পিস্তলে বুলেট লোড-আনলোড করে আমাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে বলেন, “তোর কোন পায়ে গুলি করব, বল?”এ ছাড়া তাঁরা জোর করে আমার মুঠোফোন চেক করেন।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আরেক ভুক্তভোগী ইউনুস খানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘একা পেয়ে আমাদের সংগঠনের এক নেতাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে কাপুরুষের পরিচয় দিয়েছে ছাত্রলীগ। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।’ সেই সঙ্গে ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, ‘ওই ছেলেকে কোনো ধরনের মারধর, হুমকি কিংবা মানসিক নির্যাতন করা হয়নি। তবে এর আগেও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। সেই সন্দেহ থেকে তাঁকে নিয়ে এসে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাঁর কাছে সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস পাওয়া গেলেও ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এমন কিছু তাঁর কাছে আমরা পাইনি। পরে তাঁকে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে হস্তান্তর করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘ঘটনা জানতে পেরে আমি ওই হলে দুজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠিয়েছি। তাঁরা সেখান থেকে তাঁদেরকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। তবে মারধর বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের কোনো অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা। অভিযোগ পেলে ঘটনা যাচাই–বাছাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’