বন্যায় আফগানিস্তানের অনেক এলাকা তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট কাদায় ভরে গেছে। স্থানীয় লোকজন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বাঘলান প্রদেশ, আফগানিস্তান | ছবি: এএফপি

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তালেবান সরকার দেশটিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

দারিদ্র্যে জর্জরিত কৃষিনির্ভর দেশটিতে গতকাল শুক্রবার বাঘলান, তাখার ও বাদাকাশানের পাশাপাশি পশ্চিমাঞ্চলীয় ঘর ও হেরাত প্রদেশে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এতে নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন প্রদেশের গ্রাম, সড়ক ও কৃষিজমি কাদাময় হয়ে পড়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী এএফপির স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, শনিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন, ধ্বংসস্তূপে ভরা রাস্তাঘাট ও কাদার মধ্য থেকে স্থানীয় লোকদের উদ্ধার করতে দেখা গেছে। দুর্গত এলাকায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা উদ্ধারকর্মী মোতায়েন করেছে। দেওয়া হয়েছে ত্রাণ। বন্যার কারণে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কিছু এলাকায় সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।

ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে একটি উত্তরাঞ্চলের বাঘলান প্রদেশ। শুধু এ প্রদেশেই তিন শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে।

আফগানিস্তানে কর্মরত জাতিসংঘ সংস্থার যোগাযোগ কর্মকর্তা রানা দেরাজ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাঘলান প্রদেশে ৩১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২ হাজার ১১টি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে এবং ২ হাজার ৮০০টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

তবে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে তালেবান সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন মানবিক সংস্থাগুলোর তথ্যে হেরফের রয়েছে। জাতিসংঘের অভিবাসনবিষয়ক সংস্থার (আইওএম) তথ্যানুযায়ী, শুধু বাঘলান প্রদেশেই ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

অপর দিকে আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল মতিন বলেছেন, বাঘলান প্রদেশে ১৩১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, অনেকেই এখন নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, তাখার প্রদেশে ২০ জন এবং পার্শ্ববর্তী বাদাকাশানে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

বাঘলান প্রদেশের রাজধানী পোল-ই-খোমরির বাসিন্দা জান মোহাম্মদ দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘এ বন্যায় আমার বাড়িঘর ও পুরো জীবন ভেসে গেছে।’ বন্যার পানি বাড়তে শুরু করলে তাঁর পরিবার উঁচু জায়গায় ঠাঁই নেয়। কিন্তু আকাশ পরিষ্কার হতেই তারা বাড়ি ফিরে আসে। এসে দেখে, কিছুই নেই। ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, ঘরের সব ভেসে গেছে। জান মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি জানি না ওদের নিয়ে আমি কোথায় যাব, কী করব।’

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে খাদ্য, ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

গত মাসের মাঝামাঝিতেও দেশটির ১০টি প্রদেশে বন্যায় প্রায় ১০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।