রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আবদুল লতিফ হলের গেটে তালা লাগিয়ে গতকাল সোমবার ভাঙ্চুর করা হয় | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নবাব আবদুল লতিফ হলে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাধ্যক্ষ পরিষদ। সেই সঙ্গে তাঁদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে মামলা করা হবে। প্রাধ্যক্ষ পরিষদের এক জরুরি সভায় গতকাল সোমবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে আজ মঙ্গলবার হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সভা করতে যাচ্ছে। এতে হল পরিচালনা করতে গিয়ে ছাত্রলীগের কাছে হেনস্তার কথা তুলে ধরা হবে। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেবে, তা–ও জানতে চাওয়া হবে বলে কয়েকজন প্রাধ্যক্ষ জানিয়েছেন।

এর আগে গতকাল বেলা দেড়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত নবাব আবদুল লতিফ হলের গেটে তালা লাগিয়ে ভাঙচুর করা হয়। হল প্রাধ্যক্ষের অভিযোগ, ছাত্রলীগ নেতাদের ২০টি জার্সি না দেওয়ায় তাঁরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আন্দোলন করে হলে ভাঙচুর চালিয়েছেন। তবে ছাত্রলীগের অভিযোগ, দুপুরে হলের ডাইনিংয়ে খাওয়ার সময় এক শিক্ষার্থী খাবারে সিগারেটের একটি অংশ দেখতে পান। সেখান থেকে আন্দোলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হল প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তহল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতায় যোগ্যদের হল থেকে জার্সি–সরঞ্জামসহ প্রতিদিনের প্র্যাকটিসে খাবারের জন্য একটি নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ থাকে। নবাব আবদুল লতিফ হলের শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাসকিফ আল তৌহিদ ছাত্রলীগের ২০ নেতা-কর্মীর একটি তালিকা দিয়ে তাদের হল প্রশাসন থেকে জার্সি দেওয়ার কথা বলেন। প্রাধ্যক্ষ এতে সায় দেননি। গতকাল দুপুরে হলের ডাইনিংয়ে খেতে যান মনির হোসেন নামের ছাত্রলীগের এক কর্মী। খাবারের মধ্যে তিনি সিগারেটের একটা অংশ দেখতে পান। পরে ডাইনিং কর্মচারীদের সঙ্গে উচ্চবাচ্য করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে উপস্থিত আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে ডাইনিং ভাঙচুর করেন এবং গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে হলের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে গেটে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন তাঁরা।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান হোসেন, হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাসকিফ আল তৌহিদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমানকে দেখা যায়। তাঁরা হলের প্রধান ফটকে লাল কাপড় টাঙিয়ে ও গেটে তালা দিয়ে অবস্থান নেন। প্রাধ্যক্ষকে নিয়ে নানা স্লোগানও দেন তাঁরা। হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষের নেমপ্লেট এবং তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া হলের একটি সিসিটিভি ক্যামেরা, একটি ঘড়ি, নোটিশ বোর্ড ও গেস্টরুম ভাঙচুর করেন।

ভাঙচুর করা হয়েছে নবাব আবদুল লতিফ হলের গেস্টরুম | ছবি: সংগৃহীত

খবর পেয়ে গতকাল বেলা দুইটার দিকে হল প্রাধ্যক্ষ এ এইচ এম মাহবুবুর রহমান হলের সামনে আসেন। তিনি এলে শিক্ষার্থীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাঁকে গালিগালাজ করা হয়। প্রাধ্যক্ষ হলে প্রবেশ করতে না পেরে সেখান থেকে চলে যান। পরে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদসহ একজন সহকারী প্রক্টর আসেন। এ সময় তাঁদেরও হলের মধ্যে আটকে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া শুনে তিনি তা পূরণ করার আশ্বাস দেন। পরে হলগেটের তালা খুলে দেওয়া হয়। তবে প্রাধ্যক্ষের কক্ষে আজ সকাল ১০টার দিকেও তালা দেওয়া রয়েছে।

এ ব্যাপারে হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তাসকিফ আল তৌহিদ বলেন, আন্দোলনটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এখানে ছাত্রলীগের কিছুই করার ছিল না। খাবারে সিগারেটের একটি টুকরা থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত। পরে ছাত্ররা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করেন। তাঁরা হলের খাবার, পানি, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, ইন্টারনেট সমস্যার সমাধানসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছেন। জার্সি চাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কেন জার্সি চাইতে যাব?’

প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক ও লতিফ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনার পর তাঁরা গতকাল সন্ধ্যায় জরুরিভাবে প্রাধ্যক্ষ পরিষদের সভা ডেকেছিলেন। অনলাইনে এই সভায় এই ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জড়িতদের বহিষ্কার এবং সন্ত্রাসী কায়দায় ভাঙচুর করায় তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, গত রোববার তাসকিফ আল তৌহিদ তাঁর কাছে জার্সি চাইতে এসেছিলেন। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, এখানে যাঁরা যোগ্য তাঁরাই পাবেন। এ ঘটনার রেশ ধরে খাবারে সিগারেটের বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সাজানো হয়েছে। হলে অনেক ভাঙচুর হয়েছে। তাঁর কক্ষের নেমপ্লেট ভেঙে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থী হিসেবে দেখতে চান। তাঁদের কাছ থেকে সে রকমই আচরণ প্রত্যাশা করেন। কিন্তু এর ব্যত্যয় ঘটছে। আজ সকালে তাঁরা জরুরিভাবে প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে বসবেন। পরে এ বিষয়ে শুনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।