প্রতিনিধি রাজশাহী: ভোটকেন্দ্রের বাইরে জিলাপির দোকানের সামনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী নারীদের ভিড়। ভোট দিয়ে জিলাপি খেতে এসেছেন। খেতে খেতে মিনতি মার্ডি নামের একজন বললেন, ‘সিতারে ভোটিং এমকিদা (সকাল সকাল ভোট দিয়েছি)।’ তাঁর কথার সঙ্গে হাটগোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যের মিল পাওয়া গেল। তিনি বলেছিলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ভোটারদের উৎসাহ বেশি থাকায় সকালে বেশি ভোট পড়েছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে তাঁরা বুধবার হাটগোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসেছিলেন। ভোট দেওয়ার পর জিলাপি খাওয়ার উৎসবে মাতেন। এই নারীদের বাড়ি গোদাগাড়ীর মোহনপুর ইউনিয়নের কাঠিয়া গ্রামে। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ নারীর নাম বিটিয়া হাসদা। বয়স জিজ্ঞাসা করতেই বলে বসেন, ‘২০০ বছর।’ শুনে সঙ্গের নারীরা হেসে গড়াগড়ি খান। হাত থেকে জিলাপি পড়ে যায় যায় অবস্থা।
ষাটোর্ধ্ব সোনামণি মুর্মূ বললেন, ‘বয়স হলে মাথা ঠিক থাকে না। কী বলতে কী বলে ফেলেছে! বিটিয়ার বয়স ৭০-৮০ বছরের মধ্যে হবে। ভোট দেওয়ার জন্য আজ আমরা মাঠে কাজে যাইনি।’ জিলাপি খাওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই আফিরা হেমব্রম বললেন, কোনো প্রার্থীর টাকার জিলাপি নয়, নিজের টাকা দিয়ে জিলাপি কিনছেন। কথা বলে চলে যাওয়ার সময় এই প্রতিবেদক কোন প্রার্থীর লোক জানতে চাইলেন ৪০ বছর বয়সী সীমা সরেন। সাংবাদিক কারও সমর্থক নন, শুনে বলে বসলেন, ‘তাহলে আমাদের জিলাপি খাওয়ান।’ জিলাপি কিনে দেওয়ার পর খেতে খেতে বললেন, ‘আইসা সরাহাও (অনেক ধন্যবাদ)।’
ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিজবুল্লাহ মুজাহিত বলেন, কেন্দ্রের মোট ভোটার ৩ হাজার ৪০ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ভোট পড়ে। ১২টায় ইউএনওর কাছ থেকে জানা যায়, তখনো উপজেলা সদরের অন্য কোনো কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ ভোট পড়েনি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিজবুল্লাহ মুজাহিত বললেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও সনাতনী ভোটার বেশি থাকায় হাটগোবিন্দপুরে সকালে বেশি ভোট পড়েছে। বিকেল পাঁচটায় জানান, তাঁর কেন্দ্রে ৪৮ শতাংশ ভোট পড়েছে।
কাঁকনহাট কলেজ কেন্দ্রের বাইরে আমগাছ ঘিরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষের ভিড়। পাশেই বসেছে অস্থায়ী জিলাপির দোকান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
গোদাগাড়ীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেল, যেসব কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বেশি, সেখানে মিষ্টির দোকান বসেছে। সেখানে কিছুটা হলেও ভোটের উৎসব দেখা গেল। কাঁকনহাট কলেজ কেন্দ্রের বাইরে আমগাছ ঘিরে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারী-পুরুষের ভিড় দেখা গেল। ভেতর থেকে একজন নাম ডাকছেন, ‘রিপালী সরেন, ফুলমতী হাসদা, লীলাবতী সরেন, সোহাগী মুর্মু...।’ ভেতরে ঢুকে কাঁকনহাট পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারকে পাওয়া গেল। বললেন, যাঁরা ভোট দেননি, তাঁদের স্লিপ দিতে নাম ডাকছেন। এ জন্য সবাই আমগাছের নিচে ঘিরে দাঁড়িয়েছেন।
ওই আমগাছের পাশে বসেছে অস্থায়ী জিলাপির দোকান। বেলা দেড়টার দিকে দোকানদার মো. মানিক বললেন, ‘সকাল থেকে ৮০-৯০ কেজি জিলাপি বিক্রি করেছি।’ কর্মচারী নতুন করে গামলায় আটা মাখাচ্ছিলেন। বললেন, ভোটের দিনে এই এলাকার মানুষ ভোট দিয়ে জিলাপি খেতে খেতে বাড়ি যান। এ জন্য দোকান বসে।
সবচেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা গেল উত্তরগ্রাম আলোকছত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে চারটা। কেন্দ্রের ভেতরে নারীদের দীর্ঘ সারি। কিন্তু পুরুষ ভোটারদের কোনো সারি নেই। ভোটাররা ভোট দিয়েই বাইরে এসে দাঁড়াচ্ছেন। কেন্দ্রের বাইরে শত শত মানুষ উৎসবে মেতেছেন। সেখানে অন্তত ১০টি মিষ্টির দোকান দেখা গেল। সবাই ভোট দিয়ে যাওয়ার সময় মিষ্টি বা জিলাপি কিনে বাড়ি যাচ্ছেন।