কোরবানির পশু | ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদুল আজহার বাকি মাসখানেকের মতো। তবে এরই মধ্যে কোরবানির পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এখন খামারে গিয়ে গরু কিনছেন ক্রেতারা। খামারিরা জানিয়েছেন, গোখাদ্যের দাম বেশি থাকায় এবার গরুর দাম বেশি পড়ছে। সরকারি হিসাবে, দেশে গতবারের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর মজুত বেশি। ফলে পশুর সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই।

কোরবানির হাট শুরুর বেশ আগেই পশু বিক্রির আয়োজনে এবার ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি বলে বাজার সূত্রে জানা গেছে। খামারিরা এর জন্য চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে দায়ী করছেন। ঢাকার মাংসের বাজারেই এখন গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির পশু আগেভাগে কিনতে পারলে কিছুটা কমে পাওয়া যায় বলে অনেকেই খামারে গরু বুকিং দিচ্ছেন। অনেকেই আবার হাটে গিয়ে গরু কেনার ঝামেলায় যেতে চান না বলে আগেভাগে কোরবানির পশু কিনে ফেলছেন। কিছু ক্রেতা আবার অনলাইনেও গরু কেনার চাহিদা জানাচ্ছেন। খামার থেকে বা অনলাইনে গরু কিনলে ক্রেতারা সাধারণত ‘লাইভ ওয়েট’ বা ওজনের মাধ্যমে জীবন্ত পশুর দাম নির্ধারণ করেন।

কেরানীগঞ্জের অ্যাপল অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী রোমান শরিফ জানান, এবার তিনি কোরবানির জন্য ৭০টি গরু লালন-পালন করেছেন, যার মধ্যে ৩০টি এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এখন যে গরু আছে, সেগুলোর দাম ৩ লাখ থেকে শুরু করে ১২ লাখের মধ্যে। কম দামের গরু আগেই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে গোখাদ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেভাবে গরুর দাম বাড়ানো যায়নি। তাতে লাভ কমেছে।’

খামারিরা জানিয়েছেন, গত বছর লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরুর দাম প্রতি কেজিতে ৪৮০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এ বছর ৫০০ টাকা কেজি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে। লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে পুরো গরুর ওজনের ভিত্তিতে এর দাম নির্ধারণ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলতি বছরের শুরুতেও প্রতি কেজি গমের ভুসির দাম ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা, বুটের খোসা ৫২ থেকে ৫৩ টাকা, চালের খুদ ২৯ থেকে ৩০ টাকা ও দানাদার ফিডের দাম ৪৯ থেকে ৫০ টাকা ছিল। তবে বর্তমানে প্রতি কেজি গমের ভুসি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা, বুটের খোসা ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, চালের খুদ ৩৮ থেকে ৪০ টাকা ও দানাদার ফিড ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পানি-বিদ্যুৎ বাবদ খরচও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। ফলে লালন-পালন খরচ বৃদ্ধি পেয়ে বাজারে গরুর দাম বেড়েছে।

পশুর জোগান বেশি
চলতি বছর ঈদুল আজহায় গতবারের তুলনায় পাঁচ লাখ অতিরিক্ত কোরবানিযোগ্য পশু জোগান দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুর রহমান জানিয়েছেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ‘এবার ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি পশু সরবরাহের আয়োজন রাখা হয়েছে। অর্থাৎ গতবারের চেয়ে আরও ৫ লাখ বেশি পশু বাজারে পাওয়া যাবে।’

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ) জানিয়েছে, সারা দেশে সংগঠনটির ১৮ হাজারের বেশি সদস্যের প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ১০টি করে গরু আছে। অনেক খামার আছে যেগুলোতে কয়েক শ পশুও আছে। সংগঠনটির নেতারা দাবি করছেন, যে পরিমাণ গরু এবার মজুত আছে, তাতে বাজারে গরুর সংকট হবে না।

বিডিএফএর সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান বলেন, গরু বিক্রিতে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

অনলাইনে বেচাকেনা যেমন
প্রতিবছরই প্রচলিত হাটের বাইরে অনলাইনকেন্দ্রিক গবাদিপশুর বেচাকেনা জমে ওঠে। মূলত কোভিড মহামারির সময় থেকে কোরবানির পশুর অনলাইন বাজার বড় হতে শুরু করে। এবারও অনলাইনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বেচাকেনা করছেন। তবে মূলত শহরের ক্রেতারা গরু কিনতে অনলাইনের ব্যবহার বেশি করেন। আর গ্রামের কোরবানিদাতারা এখনো প্রথাগত গরুর হাটের ওপরেই নির্ভর করেন।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক নাসিমা আক্তার বলেন, ‘অনলাইনে বেচাকেনা বাড়াতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনেক ক্রেতা এটা পছন্দ করেন, কারণ এতে ঝামেলা কম।’ তিনি অবশ্য মনে করেন, অনলাইনেও গরু এবং কোরবানির অন্য পশুর বেচাকেনা ঈদের ঠিক আগে জমে উঠবে।