রবার্ট ফিৎসোর ওপর হামলার পর তাঁকে একটি গাড়িতে তুলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন নিরাপত্তারক্ষীরা | ছবি: রয়টার্স |
পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিৎসো হত্যাচেষ্টার পেছনে রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁর দলের সদস্যরা। একে ‘গণতন্ত্রের ওপর হামলা’ বলেও বর্ণনা করেছেন তাঁরা। এমনকি এই হত্যার পথ তৈরির জন্য গণমাধ্যমকেও দায়ী করেছেন ফিৎসোর মন্ত্রিসভার একজন সদস্য।
গতকাল বুধবার দেশটির হ্যান্ডলোভা শহরে গুলির ঘটনাটি ঘটে। সেখানে একটি সরকারি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ফিৎসো। বৈঠক থেকে বের হওয়ার পরই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। ওই হামলাকারীকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, তাঁর বয়স ৭১ বছর।
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করা ব্যক্তি কে |
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন হামলাকারী একজন লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী। স্লোভাকিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাতুস সুতাজ এস্তোকও আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ওই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ওপর একাই হামলা চালিয়েছেন। এর আগে তিনি একাধিকবার সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
এদিকে স্লোভাকিয়ার গণমাধ্যমে এক ব্যক্তির ভিডিও ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, তিনি সরকারি নীতির সঙ্গে একমত নন। ওই ব্যক্তিই গতকালের হামলাকারী বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। তবে তিনি হামলাকারী কি না বা কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি বিবিসি।
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিৎসো | ফাইল ছবি: রয়টার্স |
রাশিয়ার চলমান হামলার মধ্যে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা বন্ধ ও মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে দেশের ভেতরে বেশ সমালোচনার মুখে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিৎসো। আর এমন দিনে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটল, যেদিন রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আরটিভিএস বন্ধে সরকারের প্রস্তাব নিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নিয়ে সরকারি ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ করছেন স্লোভাকিয়ার নাগরিকেরা। এ নিয়ে গতকাল সরকারবিরোধী দলের নেতৃত্বে একটি সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর হামলার খবর প্রকাশের পর ওই সমাবেশ স্থগিত করা হয়।
এ হামলার জন্য বিরোধী দলগুলোর ‘ভুল ব্যাখ্যাকে’ দায়ী করেছেন স্লোভাকিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী টমাস তারাবা। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এর আগেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারবার বলেছিলেন যে তাঁর ওপর এমন হামলা হতে পারে।’
স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোকে গুলি করার পর ঘটনাস্থল থেকে সন্দেহভাজন এক হামলাকারীকে আটক করে পুলিশ | ছবি: রয়টার্স |
এদিকে রবার্ট ফিৎসোর ওপর হামলার পরিবেশ তৈরির পেছনে গণমাধ্যমেরও হাত আছে বলে মনে করেন উপপ্রধানমন্ত্রী এস্তোক। এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই ঘৃণার বীজ আপনাদেরই অনেকে বপন করেছেন। রাজনৈতিক কারণেই এই হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে।’
পাঁচটি গুলি করা হয়েছিল ফিৎসোকে
গতকাল দিনদুপুরে খুব কাছ থেকে ৫৯ বছর বয়সী ফিৎসোর ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় তাঁকে ঘিরে ছিলেন সমর্থকেরা। হামলাকারী ফিৎসোকে লক্ষ্য করে পাঁচটি গুলি চালিয়েছিলেন। সেগুলো প্রধানমন্ত্রীর হাত ও পেটে লেগেছিল।
ফিৎসোর ওপর হঠাৎ এ হামলার পর হকচকিয়ে যান তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা। ঘটনাস্থল থেকে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, আহত প্রধানমন্ত্রীকে দ্রুত গাড়িতে তুলছেন কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। এরপর ওই গাড়ি উচ্চগতিতে সেখান থেকে চলে যায়। এ সময় হামলাকারীকে আটক করেন বাকিরা।
উদ্ধারের পর ফিৎসোকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আরেকটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে রাতভর তাঁর শরীরে অস্ত্রোপচার করা হয়। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবনশঙ্কায় স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী |