জয়পুরহাটের কালাইয়ে ফসলে মাঠে বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে পড়ে থাকা তরুণের মরদেহ | ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের কালাইয়ে ফসলি খেতে বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে পড়ে থাকা নিহত তরুণের পরিচয় পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে তাঁর মৃত্যুর রহস্যও উদ্ঘাটন হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি করতে এসে ওই তরুণ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। হাতে বৈদ্যুতিক তার জড়ানো ছিল। শরীরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার চিহ্নও ছিল।
তবে পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, ওই বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি করতে এসে মারা যাননি। এমনি ওই কালাই উপজেলার ওই ফসলি খেতেও তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হননি। ওই তরুণ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের প্রভুরামপুর গ্রামে একটি লিচুবাগানে জিআই তারে দেওয়া বিদ্যুৎ–সংযোগে স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। এ ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নিতে লিচুবাগানের মালিক জহুরুল ইসলাম নিহত তরুণের লাশ বস্তায় ভরে পাশের কালাই উপজেলার পুরগ্রামে ফসলি খেতে গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে ফেলে গেছেন।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াসিম আল-বারী আজ সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন। নিহত ওই তরুণের নাম হাসান আলী (২৭)। তিনি গোবিন্দগঞ্জের রাজাহার ইউনিয়নের প্রভুরামপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
সকালে কালাইয়ের উদয়পুর ইউনিয়নের পুরগ্রামে গভীর নলকূপের পাশে বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচ থেকে হাসান আলীর লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। রাজাহার ও উদয়পুর দুটি ভিন্ন জেলায় হলেও পাশাপাশি ইউনিয়ন। প্রথম ও দ্বিতীয় ঘটনাস্থলের দূরত্ব চার কিলোমিটারের মতো।
কালাই থানা-পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, পুরগ্রামের ফসিল মাঠে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপ রয়েছে। সমিতির মাধ্যমে গভীর নলকূপটি পরিচালিত হয়। ওই গভীর নলকূপের বিদ্যুৎ–সংযোগের জন্য ধানখেতের পাশে বৈদ্যুতিক পোলে তিন ফেজের ট্রান্সফরমার রয়েছে। আজ সকালে গ্রামের লোকজন মাঠের ধানখেত দেখতে গিয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে নীল গেঞ্জি ও জিনসের প্যান্ট এবং কোমরে হলুদ রঙের গামছা বাঁধা অবস্থায় এক তরুণের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ওই তরুণের হাতে বৈদ্যুতিক তার ছিল। তাঁর শরীরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার চিহ্ন ছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট ৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়। এরপর থানা-পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে নিহত ওই তরুণের পরিচয় নিশ্চিত হয়।
কালাই থানার ওসি ওয়াসিম আল-বারী বলেন, গোবিন্দগঞ্জের প্রভুরামপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম তাঁর লিচুবাগানের লিচু চুরি রোধ করতে রাতের বেলায় লিচুবাগানের চারপাশে জিআই তারে বিদ্যুৎ–সংযোগ দিয়ে রাখেন। গতকাল রোববার রাতে হাসান তাঁর দুই বন্ধু জেমস ও সোহাগের সঙ্গে রাত ১১টা পর্যন্ত তাঁদের গ্রামে ধান মাড়াইয়ের কাজ করেন। এরপর তাঁরা তিন বন্ধু মিলে জহুরুলের লিচুবাগানে লিচু চুরি করতে যান। হাসান লিচুবাগানে ঢুকতেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। তখন দুই বন্ধু জেমস ও সোহাগ সেখানে হাসান আলীকে রেখে পালিয়ে আসেন। বাগানের মালিক জহুরুল ইসলাম টের পেয়ে হাসান আলীর লাশ বস্তাবন্দী করে কালাই উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের পুরগ্রামের ফসলি মাঠে গভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক খুঁটির নিচে রেখে বাড়িতে ফিরে যান।
আজ সকালে কালাইয়ের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে এবং এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেমস ও সোহাগ কালাই থানা-পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁরা সব খুলে বলেন। এতে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন হয়।
ওসি ওয়াসিম আল-বারী বলেন, জয়পুরহাট ৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে হাসান আলীর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় মামলা হবে।
যোগাযোগ করা হলে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি শামসুল আলম শাহ সন্ধ্যা সাতটার দিকে বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। নিহত তরুণের পরিবারের কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।