মেডিকেল কলেজে পড়ার স্বপ্ন বহু শিক্ষার্থীর। তারপরও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এক হাজারের বেশি আসন খালি | প্রতীকী ছবি |
শিশির মোড়ল: বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো শিক্ষার্থীর সংকটে পড়েছে। আগামী ৫ জুন প্রথম বর্ষ এমবিবিএস ক্লাস শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু কলেজগুলোতে এক হাজারের বেশি আসন খালি আছে। উপায় খুঁজতে আজ শনিবার সভা ডেকেছে কলেজমালিকদের সংগঠন।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর একটি অংশের অভিযোগ, শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর অবস্থানের কারণে কলেজগুলো শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ভালো, তাদের শিক্ষার্থীর অভাব নেই, আসন খালি নেই। বাজারে যাদের সুনাম নেই, তারা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। মেডিকেল শিক্ষার মান ঠিক রাখতে হলে কঠোর ভর্তিপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তা শুরু করতে হবে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর আয়ের অন্যতম বড় উৎস শিক্ষার্থী ভর্তির অর্থ। একজন শিক্ষার্থী ভর্তি করে কলেজ ফি বাবদ পায় ১৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। কোনো কোনো কলেজ ভর্তি থেকে আয় করে বছরে ২০ কোটি টাকার বেশি। অভিযোগ আছে, ভর্তির ব্যাপারে কলেজগুলো যতটা মনোযোগ দেয়, শিক্ষার ব্যাপারে তা দেয় না।
জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে–নজির আহমেদ বলেন, দেখা গেছে বেসরকারি মেডিকেল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা অনেকে চিকিৎসা পেশাতেই আসেন না। তাঁরা উচ্চতর ডিগ্রি বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভালো করেন না। বাবা–মায়েরা অনেক টাকা খরচ করে এখন বেসরকারি কলেজে সন্তানদের ভর্তি করাতে চাচ্ছেন না বলে তিনি মনে করেন।
পরিস্থিতি কী
বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুবিন খান গতকাল শুক্রবার বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ১ হাজার ২০০ আসন খালি আছে। এর মধ্যে মেধাবী দরিদ্র ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসনও আছে। মেধাবী দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে ভর্তি করা হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ ৩৭টি, এর আসন সংখ্যা ৫ হাজার ৩৮০। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৬৭টি, এগুলোর আসনসংখ্যা ৬ হাজার ২৯৩। এর মধ্যে দেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আসন ৩ হাজার ৫৫১টি। বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ ২ হাজার ৭৪২টি আসন। দেশি ও বিদেশিদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনের ১৯ শতাংশ খালি আছে বলে এম এ মুবিন খান দাবি করেছেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শেষ হওয়ার পর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়। সরকারি ও বেসরকারি কলেজে শিক্ষার্থীদের মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। মেধাক্রমের ওপরের দিকে থাকা শিক্ষার্থীরা ভালো কলেজে ভর্তি হন।
কেন কিছু কলেজ সংকটে
রাজধানীর ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজে আসন ১২০টা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই কলেজে একটা আসনও খালি নেই। কলেজটি ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। এ রকম আরও বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীর সংকট নেই।
সংকটে পড়েছে সেসব কলেজ, যাদের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই, নেই হাতে–কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা। এগুলোর সংখ্যা বেশি। এরা শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। এরা ইচ্ছা করলেই শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারছে না।
কারণ, এমবিবিএস ভর্তিপ্রক্রিয়া এখন পুরোপুরি ডিজিটাল হয়েছে। কোন মেধাক্রমের শিক্ষার্থী কোন কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করেছেন, কোন কলেজ কোন মেধাক্রমের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাচ্ছে, তা স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগে জানতে পারে।
মন্ত্রণালয়ের ভর্তিসংক্রান্ত একটি কাগজে বলা হয়েছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম হতে দেখা গেছে। ৭,০০০ মেধাক্রমে থাকা শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে মেধাক্রমের ৭০,০০০ অবস্থানের শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানোর নজির আছে। ভর্তিপ্রক্রিয়া ডিজিটাল হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের হয়রানি, অনিয়ম ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পথ বন্ধ হয়েছে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০২১–২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির সময়।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর একটি অংশ বলছে, বিদ্যমান ভর্তিপ্রক্রিয়ার কারণে তারা শিক্ষার্থীর সংকটে পড়েছে। এই সংকট উত্তরণের জন্য আজ তারা সভা ডেকেছে।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী রোকেয়া সুলতানা বলেন, ‘আমরা মানসম্পন্ন মেডিকেল শিক্ষা চাই। সবারই এটাই মেনে চলা উচিত।’