প্রতিনিধি বগুড়া: বগুড়ার গাবতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯০০টি ব্যালট পেপার বাইরে থেকে সিল মেরে বাক্সে ঢোকানোর সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও এক প্রার্থীর এজেন্টকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় সিল মারা ৬০০টি ব্যালট ও ৯০০ ব্যালট–সংবলিত একটি মুড়ি বই জব্দ করা হয়েছে। আটকের আগেই ৩০০ ব্যালট পেপার বাক্সে ঢোকানোর কথা স্বীকার করেছেন ওই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার মাঝপাড়া কুসুমকলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আটক প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নাম শাহজাহান আলী। আর ওই এজেন্টের নাম এরশাদ আলী। এরশাদ আনারস প্রতীকের প্রার্থী, বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খানের এজেন্ট হিসেবে ভোটকেন্দ্রে ছিলেন।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার রামেশ্বরপুর ইউনিয়নের মাঝপাড়া কুসুমকলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র থেকে ৯০০টি ব্যালট পেপার বাইরে পাঠান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা শাহজাহান আলী। আনারস প্রতীকের প্রার্থীর এজেন্ট এরশাদ আলীর মাধ্যমে সিল মারা ব্যালটগুলো বাক্সে ঢোকাচ্ছিলেন। এ সময় ৬০০টি ব্যালট ও ৯০০ ব্যালটের একটি মুড়ি বইসহ তাঁদের আটক করা হয়। আটকের সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ৩০০ ব্যালট পেপার তিনি ইতিমধ্যে বাক্সে ফেলেছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, আনারস প্রতীকে সিল মেরে ৬০০ ব্যালট বাক্সে ভরার সময় হাতেনাতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। ৩০০ ব্যালট বাক্সে ফেলার কথা স্বীকার করেছেন ওই প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
আরও তিন কর্মকর্তাকে অব্যাহতি
গাবতলী উপজেলার সোনারায় উচ্চবিদ্যালয় (পুরুষ) কেন্দ্রে এক প্রার্থীর সমর্থকেরা বাইরে থেকে ব্যালটে সিল মেরে ভোটকক্ষে ঢুকে বাক্সে ভরার অভিযোগে কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্র–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আজ সকাল ১০টার দিকে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী রফি নেওয়াজ খানের ১০ থেকে ১৫ জন সমর্থক সোনারায় উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের দ্বিতীয় তলার ৪ ও ৫ নম্বর বুথে ঢুকে পোলিং এজেন্টের কাছ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নেন। এরপর আনারস প্রতীকে সিল মেরে সেগুলো ব্যালট বাক্সে ফেলেন তাঁরা। খবর পেয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আফসানা কেন্দ্রে এসে ব্যালট পেপারের মুড়ি বইয়ে ভোটারের স্বাক্ষর না পাওয়ায় ছয়টি মুড়ি বই জব্দ করেন। এ সময় সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম ও হাফিজুর রহমানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এ টি এম আমিনুর রহমানকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ওই কেন্দ্রের সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জাল ভোটের দায় স্বীকার করে বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ জন যুবক বুথে এসে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে গোপন কক্ষে গিয়ে সিল মেরেছে। তাদের আমি চিনি না। নিরুপায় হয়ে মেনে নিয়েছি।’
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান বলেন, বাইরে থেকে সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরার অভিযোগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ দুজনকে আটক এবং দুজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দুই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলবে বলে জানান তিনি।