বিশেষ প্রতিবেদক: উচ্চপর্যায়ের ক্ষমতার অপব্যবহারের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি ও দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ড, সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশপ্রধানের (আইজিপি) সম্পদ জব্দে আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এই আহ্বান জানিয়েছে তারা।

আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবি বলেছে, ওই তিনটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতার ঘোষণার যথার্থতা প্রমাণের বাধ্যবাধকতা অভূতপূর্ব গুরুত্ব লাভ করেছে বলে মনে করে টিআইবি।

সাবেক পুলিশপ্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এবং একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যেসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্যউপাত্ত প্রকাশিত হচ্ছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এসব ঘটনায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল শুধু বিভিন্নভাবে দায়সারাভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তা যেমন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, তেমনি সরকারের জন্যও আত্মঘাতী হবে। এ দেশের জনগণ ইতিমধ্যে এটুকু উপলব্ধি করতে সক্ষম যে ব্যাপক আলোচিত তিনটি ঘটনাই বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, বরং উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের বহিঃপ্রকাশ, যা হিমশৈলের চূড়ামাত্র।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এটা সহজেই বোধগম্য যে এই ধরনের অপরাধের দায় শুধু প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অতএব সরাসরি দায়ী ব্যক্তিদের পাশাপাশি পরোক্ষভাবে সহায়ক, যোগসাজশকারী, অংশীদারত্বের ফলে লাভবান এবং বিশেষ করে সুরক্ষাকারী মহলকে জবাবদিহির আওতায় আনা সম্ভব না হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার আরও এক দফা ফাঁকা বুলি হিসেবেই রয়ে যাবে। আর এ ধরনের দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন ব্যাপকতর ও গভীরতর হবে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় অপরাধ প্রমাণ সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির পাশাপাশি উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সেনাবাহিনী, র‍্যাব ও পুলিশের মতো রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাহিনীর সাবেক প্রধানসহ একজন আইনপ্রণেতার এমন দায়বদ্ধহীন কর্মকাণ্ড জনমনে সরকার, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও শাসনকাঠামো নিয়ে সংশয় ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। এর বিশ্বাসযোগ্য নিরসন জরুরি। একই সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ (দুদক) সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আলোচিত কোনো কোনো বিষয়ে যে তৎপরতা দেখাচ্ছে, তা যেন লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত না হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের ধারাবাহিক রাজনৈতিক ঘোষণা ও প্রত্যয়ের বিস্তারিত এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে। দলটির এবারের ইশতেহারে জবাবদিহিমূলক সুশাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে রয়েছে ছয় অনুচ্ছেদ–সংবলিত পুরো এক অধ্যায়ব্যাপী প্রতিশ্রুতি। একই সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রয়েছে এক ডজনের বেশি অঙ্গীকার। যদিও কীভাবে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে, তার কোনো কৌশল বা পথরেখা নির্ধারিত নেই। এমন বাস্তবতায় এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ও ক্ষমতাসীন দল যদি তাদের নিজেদের প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার বিন্দুমাত্র প্রমাণ দিতে চান, তবে তিনটি ক্ষেত্রেই মৌলিক উপাদান যে ক্ষমতার অপব্যবহার, তার বিদ্যমান স্বরূপ উদ্‌ঘাটনসহ সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠান ও খাতভিত্তিক উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা অপরিহার্য।