পদ্মার পানি শুকিয়ে এখন ধু-ধু বালু চর হয়ে গেছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: পাবনার ঈশ্বরদী পদ্মা নদীর পানি কমছে। কিন্তু নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। হতাশ জেলেদের অনেকে জাল গুটিয়ে রাখছেন। উপজেলার সাঁড়া ও পাকশী এলাকায় গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়।
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, নদীর নাব্যতা কমেছে, স্রোত নেই। চর জেগে ওঠায় মাছের দেখা মিলছে না। তবে জেলেরা আশা করছেন শিগগিরই আবার মাছ ধরা পড়বে।
পদ্মা নদীতে পানি কমায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় জেলেরা ডাঙায় এনে জাল মেরামত করছেন। রোববার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের গাইড ব্যাংক পাড়া | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
উপজেলার পাকশী ইউনিয়নের গাইড ব্যাংক পাড়া এলাকায় দেখা যায়, পদ্মা নদী শুকিয়ে নালায় পরিণত হয়েছে। মাঝ নদীতে জেগে উঠেছে বিশাল বালুর চর। নদীর পাড়ে জেলেদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছেঁড়া-ফাটা জাল মেরামত করছেন। কেউবা জাল গুটিয়ে খামাল (স্তূপ) দিয়ে রাখছেন। আবার কেউ নৌকার সংস্কার কাজও করছেন।
জেলে আরমান খান নদীর পাড়ে বসে ছেঁড়া জাল মেরামত করছেন। পাশে বসে আছেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। আরমান খান বলেন, ‘ইলিশ সংরক্ষণের অভিযান শেষে কয়দিন ভালো মাছ ধরা পড়ছিল। ওই সময় কম-বেশি অনেকে মাছ পেয়েছিলাম। ১৫ দিন ধরে তেমন একটা মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের সুতি জালে বড় মাছ ধরা পড়ে। বাধ্য হয়ে জাল তুলে ছেঁড়া-ফাটা যা আছে, ঠিক করে রাইখা দিব।’
এ যেন যৌবন হারানো বুড়ো পদ্মা, তার বুকে আটকে আছে ছোট ছোট নৌকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জেলে আক্কাস সরদার সঙ্গীদের নিয়ে নদীর পাড়ে জাল খামাল (স্তূপ) দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, কয়েক দিন মাছ মোটামুটি পেয়েছিলাম। এহন কয়দিন ধইরা তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাই তা দিয়ে নিজেদের খরচ উঠছে না। তাই জাল তুলে খামাল দিইয়া রাখছি। কিছুদিন পর আবার নামাবো।’
জেলে খায়রুল খাঁ বলেন, ‘পানি কমে নদীতে চর পরে গেছে। ছোট দুই–চারটা ইলিশ ছাড়া কোন মাছ পাওয়া যায় না। পৌষ মাসে শীত ও কুয়াশায় উজানের অনেকে মাছ ধরতে পারেন না। তখন আমাদের অঞ্চলে কিছু মাছ ধরা পড়তে পারে। এই আশায় আমরা সবাই প্রহর গুনছি।’
খায়রুল খাঁ আরও বলেন, ‘আমার তিনটি নৌকায় ১০ জনের প্রতিদিন গড়ে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ আজ (সোমবার) ৬০০ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। এই টাকা দিয়ে নৌকার খরচই উঠে না। সেখানে সংসারের খরচ চালাব কী করে?’
ঈশ্বরদী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা আ: রহমান খান বলেন, নদীতে স্রোত নেই। চর পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। নাব্যতা না থাকায় মাছ কমে যাচ্ছে। এভাবে নদীতে চর পড়তে থাকলে ভবিষ্যতে ইলিশের দেখা পাওয়া যাবে না।
পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াটার হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, এবারের প্রবাহ অনেক কম। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৯৩ হাজার ৬৪৮ কিউসেক এবং ওয়াটার লেভেল ছিল ৬ দশমিক ৫২ মিটার। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পানির প্রবাহ ও লেভেল হয়েছে যথাক্রম ৮০ হাজার ৫৩৬ কিউসেক এবং ৫ দশমিক ৬১ মিটার।
শিশুরা খেলছে পদ্মার বুকে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় পানির প্রবাহ কমেছে ১৩ হাজার ১১২ কিউসেক এবং ওয়াটার লেভেল কমেছে দশমিক ৯ মিটার। জলবায়ু পবির্তনের কারণে পৃথিবীর নদীগুলোর ভূগর্ভস্থ উচ্চতা বেড়েছে এবং পানির স্তর নিচে নেমে গেছে।