রাজশাহীতে ভ্যাপসা গরমের মধ্যে শ্রমিকেরা ঘেমেনেয়ে একাকার। বুধবার দুপুরে নগরের কাজলা এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীতে ভ্যাপসা গরমে সবার নাভিশ্বাস ছুটছে। শ্রমজীবীরা কাজ করতে বেরিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন। নগরের কাজলা এলাকায় বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীর নির্মাণের জন্য কয়েকজন শ্রমিক মাটি খনন করছিলেন। আর কয়েকজন টুকরিতে করে সেই মাটি ফেলছিলেন। মাটি কাটতে কাটতে হাঁপিয়ে উঠছিলেন তাঁরা। বারবার মুখ গামছা দিয়ে মুছছিলেন। ভ্যাপসা গরমে তাঁদের গা থেকে ঘাম ছুটছে।
সেখানে মাটি কাটার কাজ করছিলেন চারঘাট উপজেলার জয়পুর গ্রামের ইসরাইল আলী। তিনি কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটি টুকরিতে ভরছিলেন। সেই মাটি তুলে দেন পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর এলাকার মো. মোস্তাকিমের মাথায়। ইসরাইল বলেন, ‘খুব গরম পড়িছে আজ। শরীর দিয়ে খালি ঘাম বেরোচ্ছে। খালি হাঁপিয়ে যাচ্ছি। আগের মাসেও (এপ্রিলে) সর্বোচ্চ গরম গেছে। তখনো তো এত কষ্ট হয়নি।’ শ্রমিক মোস্তাকিম জানতে চান আজকে তাপমাত্রা কত? তিনি বলেন, ‘সোম ও মঙ্গলবার আবহাওয়া ঠান্ডা ছিল। আজ আর টিকা যাচ্ছে না। পানি খেয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।’
রাজশাহী আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গত রোববার রাত থেকে রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়। এতে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে আসে। গতকাল মঙ্গলবার সেই তাপমাত্রা বেড়ে ৩৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। আজ তা বেড়ে ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রয়েছে। এর সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা থাকায় প্রচণ্ড গরম অনুভূত হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়া পর্যবেক্ষক এ এস এম গাউসুজ্জামান বলেন, রাজশাহীতে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। আর বেলা তিনটায় আর্দ্রতা ছিল ৬৮ শতাংশ। রাজশাহীতে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা যদি ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তবে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়, যখন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। আর অতি তীব্র হয় ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে।
আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার সইপাড়া বাজারের পাশে পান গোছাচ্ছিলেন। পান গুছিয়ে বাজারে নেওয়া হবে। শ্রমিক রতন আলী বলেন, ভোরে খেত থেকে পান তুলেছেন। পানের বিড়া সাজিয়ে বাজারে যাবেন। কিন্তু সকাল থেকেই খুব গরম আজ। পানবরজের ভেতরে ভোর থেকেই ঘাম ঝরেছে।
বেলা তিনটার দিকে রাজশাহী নগরের মোহনপুর এলাকায় কথা হয় স্কুলশিক্ষার্থী মো. হৃদয়ের সঙ্গে। তার পরনের ইউনিফর্ম ভিজে গেছে। হৃদয় বলেন, আজ অনেক গরম। শরীর থেকে শুধু ঘাম বেরোচ্ছে। নগরের একই এলাকার রিকশাচালক আবদুল করিম বলেন, আজ রিকশা চালানো যাচ্ছে না। রোদের তেজ নেই, কিন্তু গরম খুব।