পুড়ে যাওয়া পানবরজ দেখাচ্ছেন রাজিয়া বেগম। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কুমারখালী গ্রামে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নাটোর: তিন বছর আগে দুই বিঘা জমি রেখে রাজিয়া বেগমের বাবা মারা যান। এখন পরিবারে আছেন বৃদ্ধা মা, স্নাতক (সম্মান) পড়ুয়া ছোট বোন এবং নিজের তিন সন্তান ও স্বামী। বাবার রেখে যাওয়া জমিতে পানবরজ করে তাঁর পুরো সংসার চলত। গতকাল শনিবার দুপুরে আগুনে পুড়ে পুরো পানবরজ ছাই হয়ে গেছে। এখন তাঁদের সংসার চলবে কীভাবে, তা নিয়ে দিশাহারা রাজিয়া। 

রাজিয়া বেগম নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার কুমারখালী গ্রামের মোস্তাক আহমেদের স্ত্রী। পাশের গ্রাম বাগডোব মণ্ডলপাড়ায় তাঁর দুই বিঘা আয়তনের পানবরজ ছিল। পাশের জমির মরা শিমগাছ পোড়াতে গিয়ে পানবরজে আগুন লেগে যায়। পাটশোলা ও বাঁশের কাঠি দিয়ে তৈরি আরও ২৫টি পানবরজ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মাত্র আধা ঘণ্টায়। কৃষি বিভাগের হিসাবমতে পানবরজগুলোয় আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে রাজিয়া বেগম দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বাবাহারা বোনের ও নিজের সন্তানদের পড়ালেখার খরচ কীভাবে জোগাবেন, সংসারের খরচ কীভাবে মিটবে, তা নিয়ে চিন্তার সাগরে তিনি হাবুডুবু খাচ্ছেন। একই অবস্থা অন্য ২৫ চাষিরও। বরজে দাঁড়িয়ে আছে শুধু পুড়ে যাওয়া বাঁশের খুঁটি।

আজ রোববার সকাল আটটায় বাগডোব মণ্ডলপাড়ার শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি ২৬টি পানবরজের ধ্বংসাবশেষ। বরজের আধাপোড়া বাঁশের খুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। এর মধ্যে পানের পুড়ে যাওয়া লতা-পাতা নুইয়ে পড়েছে। পানপাতার পোড়া গন্ধ তখনো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছিল।

রাজিয়া বেগম ও তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে এই প্রতিনিধির কথা হয় তাঁর পানবরজে দাঁড়িয়ে। রাজিয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাবার কেনা দুই বিঘা জমিতে আমি তিন বছর আগে পানবরজ করেছিলাম। আমার বিধবা মা, অবিবাহিত এক বোন এই পানবরজের অংশীদার। শুরুতে আমরা প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করেছি। প্রতিবছর এখানে দুই থেকে তিন লাখ টাকার পান বিক্রি হয়। এই টাকা দিয়ে আমার বোনের ও আমার বড় মেয়ের স্নাতক (সম্মান) পড়ালেখা ও সংসারের যাবতীয় খরচ মেটাই। এখন এসব খরচ কী করে জোগাব, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।’

রাজিয়া বেগমের মা রোকেয়া বেওয়া বলেন, ‘শনিবার দুপুরে আমাদের পানবরজের পাশের জমিতে আমার দেবর নিজাম উদ্দিন শিমের মরাগাছ আগুন দিয়ে পুড়াচ্ছিলেন। সে বাঁশ দিয়ে আগুনে বাড়ি দিলে আগুনের ফুলকি আমাদের পানবরজে গিয়ে পড়ে এবং মুহূর্তের মধ্যে বরজে আগুন ধরে যায়। আধা ঘণ্টার মধ্যেই সব শেষ হয়ে যায়। আমি এ ঘটনার বিচার চাচ্ছি এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করছি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গোলজার হোসেন জানান, তিনি ও তাঁর প্রতিবেশী আবদুর রহমান ঘটনাস্থলে প্রথম আসেন। তাঁর দাবি নিজাম বাঁশ দিয়ে আগুনে বাড়ি না দিলে পানবরজ পুড়ত না। তাঁর বোকামির কারণে এতগুলো লোকের সর্বনাশ হয়েছে। আবদুর রহমান বলেন, নিজাম ইচ্ছা করলে আগুন নেভাতে পারত। কিন্তু তিনি আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে পালিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি নিরুদ্দেশ। এই প্রতিনিধিও এলাকায় খোঁজ করে তাঁর সন্ধান পাননি।

বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা মুঠোফোনে বলেন, পানের বরজে আগুনের খবর পাওয়ামাত্র তিনি ঘটনাস্থলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে ২৬ জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা করা হয়েছে। জমির পরিমাণ ৩০ বিঘার কিছু বেশি হবে। ক্ষতি পরিমাণ আনুমানিক কোটি টাকার বেশি হবে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।