পেকুয়ার নব নির্বাচিত চেয়ারম্য়ান শাফায়েত আজিজ | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি চকরিয়া: কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মো. শাফায়েত আজিজ। তিনি ২২ হাজার ৯৬১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী আনারস প্রতীকের রুমানা আকতার পেয়েছেন ১৮ হাজার ১৮৭ ভোট। অন্য দুই প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের আবুল কাশেম ৬ হাজার ৬৭৩ ও দোয়াত কলম প্রতীকের মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ৬ হাজার ১৬৯ ভোট পেয়েছেন। আবুল কাশেম পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আশরাফুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২০ হাজার ৭৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন তালা প্রতীকের মাহবুবুল করিম। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান টিউবওয়েল প্রতীকের আজিজুল হক পেয়েছেন ১৫ হাজার ৫২ ভোট। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৬ হাজার ৮৩২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন কলসি প্রতীকের ইয়াসমিন সোলতানা। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাঁস প্রতীকের আজমীর নূরে জান্নাত পেয়েছেন ৮ হাজার ৮০ ভোট। বর্তমান নারী ভাইস চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম চতুর্থ হয়েছেন। ফুটবল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৩ হাজার ৭৫৯ ভোট।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শাফায়েত আজিজ, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাহবুবুল করিম ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইয়াসমিন সোলতানাকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পেকুয়া উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ৪৪টি ভোটকেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০ জন। এর মধ্যে ভোট প্রয়োগ করা হয়েছে ৫৪ হাজার ৭০৬টি। সে হিসাবে ৪০ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোট পড়েছে।

শাফায়েত আজিজ তৃতীয় ও চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দুবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন করেননি। তবে এবার বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করলেও তিনি প্রার্থী হন। এরপর তাঁকে উপজেলা বিএনপির সদস্যপদ ও জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এর আগে শাফায়েত আজিজ মগনামা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি, উপজেলা যুবদলের সভাপতি-সম্পাদক ও পেকুয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিকদারপাড়া এলাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের গ্রামের বাড়ি। তিনি তিনবার ও তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমদ একবার সংসদ সদস্য ছিলেন। এ কারণে এই এলাকা বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত।

বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা বলেন, শাফায়েত আজিজকে ঠেকাতে এককাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছিল উপজেলা বিএনপি। তফসিল ঘোষণার পর প্রথমে তাঁরা শাফায়েত আজিজের বিপক্ষে উপজেলা যুবদলের সভাপতি কামরান জাদিদকে একক প্রার্থী ঘোষণা করে। এতেও শাফায়েতকে দমাতে না পেরে ৩০ এপ্রিল মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে কামরান জাদিদ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। পরে গোপনে ও প্রকাশ্যে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পেকুয়া উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী আনারস প্রতীকের প্রার্থী রুমানা আকতারের পক্ষে মাঠে নেমে কাজ করেন। তাঁদের দাবি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের নির্দেশে রুমানার পক্ষে কাজ করেন নেতা-কর্মীরা।

জয়ের পর নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ বলেন, ‘এখন জয়ী হয়েছি। বহিষ্কার, তিরস্কার, বর্জন, অর্জন—এসব মনে রাখতে চাই না। কে বিপক্ষে করেছে, কে পক্ষে করেছে, সব ভুলে একটি সুন্দর পেকুয়া উপহার দিতে চাই।’