বাজারে বিক্রির জন্য আনা লিচু হাতে এক ব্যবসায়ী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

প্রতিনিধি ঈশ্বরদী: দাম বেশি, তাই বেশি লাভের আশায় অপরিপক্ক লিচু বেচাকেনা হচ্ছে পাবনার ঈশ্বরদী বাজারে, এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ বলছে, লিচু পরিপক্ক হতে অন্তত আরও ৭ দিন সময় লাগবে। তবে বাগান মালিক ও কৃষকরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়ে এবং কিছুদিন পরে দাম কমে যেতে পারে এই আশঙ্কায় তাঁরা এসব লিচু বাজারে নিয়ে আসছেন। তাছাড়া ইতোমধ্যেই লিচু ফাটতে শুরু করেছে এবং খোসাপচা রোগও দেখা দিয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকজন বিক্রেতা লিচুর ডালি নিয়ে বসে আছেন। দোকানে বেশ ভিড়। ক্রেতারা হাতে নিয়ে দেখছেন। পাশাপাশি দামও করছেন। তবে লিচুগুলো অপরিপক্ক, কাঁচা ও আকারে অনেক ছোট হওয়ায় কেউ কেউ লিচু না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন।  

প্রতি ১০০ লিচু ২০০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের প্রথম লিচু বাজারে আসায় অনেকে দেখছে এবং শখ করে মুখেও দিচ্ছেন। দাম বেশি হওয়ার পরও অনেকেই শখ করে কিনছেন।

স্থানীয়রা জানান, এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ শুরু হয় গত শতকের আশির দশকে। কিছু শৌখিন মানুষ বাড়ির আঙিনায় লিচু চাষ করেন। অন্য ফল ও ফসলের তুলনায় লিচুতে লাভ বেশি হওয়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে লিচু চাষ। হতে থাকে একের পর লিচুর বাগান। বাড়ির আঙিনা থেকে রাস্তা, মাঠ, ফসলের জমি সবখানেই হতে থাকে লিচুর বাগান। বর্তমানে উপজেলার ছলিমপুর, দাশুড়িয়া, সাহাপুর, পাকশী ও লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে রয়েছে লিচুর বাগান।

লিচুর পসরা সাজিয়ে বসে আছেন খুচরা বিক্রেতারা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

ঈশ্বরদীতে সাধারণত তিন জাতের লিচুর ফলন বেশি ভালো হয়। এগুলো হচ্ছে মোজাফফর বা দেশি লিচু, বোম্বাই ও চায়না-৩। এ ছাড়া বর্তমানে কদমি, কাঁঠালি, বেদানা, চায়না-১ ও চায়না-২ জাতের লিচুও চাষ হচ্ছে। তবে বোম্বাই ও চায়না-৩ বেশি সুস্বাদু। বিক্রিও হয় বেশি দামে।  

মশুড়িয়া পাড়া এলাকার সৌরভ অধিকারী জানান, বাজারে লিচু ওঠায় তা কিনে নিয়ে যান বাড়িতে। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে লিচু খেয়ে দেখেন লিচুতে এখনও মিষ্টতা আসেনি, এখনও টক।

একই কথা জানালেন শরিফুল ইসলাম। তিনি জানান, নতুন ফল বাজারে উঠেছে, তাই কিনেছিলেন। কিন্তু লিচু খেয়ে মনে হয়েছে তার সব টাকাই পানিতে দেওয়া হয়েছে। এসব লিচু খাওয়ার উপযোগী হয়নি বলে জানান তিনি।

ঈশ্বরদী বাজারের ফল ব্যবসায়ী ওবাইদুর জানান, সব লিচুই পরিপক্ক নয় এটি সঠিক নয়। অনেক লিচুই পরিপক্ক হয়েছে। মাঝে মধ্যে দুয়েকটা কাঁচা রয়েছে, যেগুলো একটু টক। তবে পরিপূর্ণ পক্ক খেতে হলে আরও দু’দিন সময় প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

চাষি বেনু সরকার জানান, এখন ঝড়ের সময়। যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, তাহলে যা আছে সবটাই লোকসান গুনতে হবে। তাই লিচু বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া এখন দামও বেশ চড়া, তাই অনেকেই অপরিপক্ক লিচুই বিক্রি করছেন।

লিচু বাগান ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পরিপক্ক হয়েছে এবং খাওয়ার উপযোগী হয়েছে মাদ্রাজি লিচু। তবে কিছু কিছু ব্যবসায়ী ও চাষি অপরিপক্ক লিচু বাজারে নিয়ে আসছে। এতে করে লিচু গাছে থাকলে যে আরও দানা হওয়ার কথা সেটি হচ্ছে না। তাছাড়া লিচুতে সেই স্বাদও নেই। তবে অনেকেই অধিক মুনাফার আশায় এসব লিচু বিক্রি করছেন।

বিক্রির জন্য লিচুর আঁটি বাঁধা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের গাঁওগোয়াইলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন    

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মিতা জানান, আবহাওয়া অনুযায়ী এ উপজেলায় লিচু পরিপক্ক হতে আরও অন্তত ৭ দিন সময় লাগবে। তাই নির্দিষ্ট সময়ের পরে এবং পরিপক্ক ও স্বাদযুক্ত লিচু বাজারে নিয়ে আসতে কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অপরিপক্ক ফল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এখানে তিন হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাণিজ্যিক বাগান রয়েছে। গাছের সংখ্যা তিন লাখের ওপর। এর মধ্যে দেড় লাখ গাছের বয়স ১৭-১৮ বছরের বেশি। এ ছাড়া সারা উপজেলাতেই বসতবাড়ির আশপাশেও রয়েছে প্রচুর লিচুগাছ। লিচু চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। অন্যান্য বছর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৫০০ থেকে ৫৫০ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হতো। তবে এবার প্রচণ্ড গরমের কারণে অন্যান্য ফলফলাদির ন্যায়  লিচুচাষিরাও অনেকটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।