ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজশাহীতে রাত থেকেই বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস বইছে। এর মধ্যেই শিশুরা বের হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে নগরের মোহনপুর এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীতে গতকাল রোববার রাত থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পরিমাণ কখনো বেশি, আবার কখনো কম। তবে রাত থেকেই টানা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। আজ সোমবার বেলা ২টা পর্যন্ত ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে কমেছে তাপমাত্রা। গতকাল রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ তা ২৬ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। ফলে অনেকটা স্বস্তি নেমেছে জনজীবনে।
বৃষ্টির কারণে শহরে মানুষের আনাগোনা কমেছে। রাস্তাঘাটে দুয়েকটি অটোরিকশা ছাড়া তেমন গাড়িও চলছে না। অনেকে বাইরে বের হয়ে গন্তব্যে যাওয়ার যানবাহন না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। অটোরিকশার ভাড়াও কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণ রাখা হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে প্রথম বৃষ্টি শুরু হয়। পরে তা থেমে মধ্যরাত থেকে আবার শুরু হয়। সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। পরে বেলা দুইটার দিকে তা বেড়ে ৩৮ মিলিমিটার পরিমাপ করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের গতি ছিল ঘণ্টায় ১২ থেকে ১৪ নটিক্যাল মাইল। বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে তাপমাত্রা কমে গেছে অনেক।
রাজশাহী আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী পর্যবেক্ষক আনোয়ারা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে মূলত বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস হচ্ছে। এটি আগামীকাল মঙ্গলবার সকালের মধ্যে কেটে যেতে পারে।
রাজশাহী নগরের চৌদ্দপাই ফায়ার সার্ভিস মোড়ে ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে সাব্বির রহমান একজন। তিনি শহরে একটি বিপণিবিতানে কাজ করেন। তাঁর পৌঁছার কথা ছিল ১০টায়। ১১টার দিকেও তিনি ওই মোড়ে অবস্থান করছিলেন। প্রথম আলোকে সাব্বির রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে বের হতে হতে দেরি হয়ে গেছে। এখানে আসার পর অটোরিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। যেগুলো পাওয়া যাচ্ছে, তা যাত্রীবোঝাই। ঝোড়ো হাওয়াতে তাঁর ছাতাও ভেঙে গেছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজশাহীতে রাত থেকেই বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস বইছে। শহরে গাড়িও কম। যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে নগরের কুমারপাড়া এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নগরের কুমারপাড়া মোড়ে কথা হয় রিকশাচালক মোরশেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রিকশা বের করেছেন। মাথায় পলিথিন বেঁধেছেন। যাত্রীদের জন্য পলিথিন বেঁধে রেখেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি আর ঝড়ের কারণে মানুষও কম, রিকশাও কম। তবে রিকশা বেশি কমে গেছে। এ কারণে মানুষের অসুবিধা বেশি হচ্ছে। তবে তাঁরা ভাড়া বেশি নিচ্ছেন না। মানুষই বেশি দিচ্ছেন।
নগরের মোহনপুর এলাকায় বেশ কয়েকজন শিশু বাড়ির বাইরে বৃষ্টি দেখতে বের হয়েছে। তারা জানায়, আজ তারা বৃষ্টির জন্য বিদ্যালয়ে যায়নি। সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত বাড়িতেই ছিল তারা। একটু বৃষ্টি দেখতে বের হয়েছে তারা।
ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিতে আমসহ খেতে থাকা বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। রাজশাহীর বাঘার সাতারি গ্রামের আমচাষি নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, এবার আমের জন্য প্রথম ঝড় হচ্ছে। বাগানে কিছু আম ঝরে পড়েছে। এখনো ঝোড়ো হাওয়া হচ্ছে। এই বাতাসে আম পড়ার জন্য যথেষ্ট। এবার এমনিতেই আম কম এসেছে। আম পড়ে গেলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, বাগানে আম পড়ে গেলে সেই আমে সর্বোচ্চ আচার হতে পারে। এ ছাড়া আর কোনো কাজে লাগে না। ঝরে পড়া আমের মধ্যে ফজলি বেশি। সেগুলোতে এখনো আঁটি হয়নি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা বলেন, রাত থেকেই ঝোড়ো বাতাস আর বৃষ্টি হচ্ছে। এখন রাজশাহীতে কৃষকের বড় ফসল আম। সেই আম কিছুটা ঝরে পড়ার খবর তাঁরা পাচ্ছেন। তবে সেটা খুব বেশি হবে না। তাঁদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায় থেকে তথ্য পাঠালে ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারবেন। তবে এখন বেশির ভাগ আম পরিপক্ব। অনেকে জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। সেই জমিতে বোরো ধান একটু দেরিতে হয়েছে। এই বৃষ্টির কারণে হয়তো ধান কাটাতে দু-এক দিন দেরি হবে। এ ছাড়া ধানের ক্ষতির তেমন আশঙ্কা নেই।