শখের বসে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী ননদ-ভাবি

ননদ–ভাবির মাশরুমের স্টল ঘুরে দেখছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ কৃষি কর্মকর্তা। সম্প্রতি বাগমারা ভবানীগঞ্জ শিশুপার্ক চত্বরে কৃষি ও প্রযুক্তি মেলায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বাগমারা: আল্পনা খাতুন ও শিল্পী খাতুন। সম্পর্কে পরস্পরের ননদ ও ভাবি। দুজনের স্বামী বিদেশে থাকেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে দুটি স্মার্টফোন কিনেছিলেন। সেই ফোনের মাধ্যমে মাশরুম চাষের পদ্ধতি শিখে এখন তাঁরা সফল উদ্যোক্তা।

প্রথম দিকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় লোকজন তুচ্ছ–তাচ্ছিল্য করলেও এখন অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। স্বল্প পরিসরে বাড়িতে মাশরুম চাষ করে তাঁরা মাসে ৯০ হাজার টাকা আয় করছেন।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নাগপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। সম্প্রতি উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের উদ্যোগে ভবানীগঞ্জ শিশুপার্ক চত্বরে আয়োজিত কৃষি ও প্রযুক্তি মেলায় তাঁরা নিজেদের সফলতার গল্প শোনাতে এসেছিলেন। চাষাবাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। মাশরুমের স্টল দিয়ে পুরস্কারও পেয়েছেন।

মেলা প্রাঙ্গণে দুই উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হয়। আলাপকালে জানালেন, দুই বছর আগে নিজেদের মাটির বাড়িতে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেন। বগুড়া থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। চাষাবাদের পদ্ধতি আয়ত্ত করেছেন ইউটিউবের ভিডিও দেখে। এ জন্য প্রথমে পরিবারের অনুমতি নেন। পরে তাঁরাও এ ব্যাপারে উৎসাহ দেন। এরপর আর থেমে থাকেননি। বসবাসের ঘরের পাশে একটি মাটির ঘর বেছে নিয়ে প্রথমে ঘর উপযোগী আর্দ্রতা ও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেন। সেখানে ৩৫০টি মাশরুম সিলিন্ডারে (প্যাকেট) চাষ করেন।

আল্পনা খাতুন বলেন, ৩০ থেকে ৩৪ দিনের মধ্যে মাশরুম বিক্রির উপযোগী হয়। চাষের ২৫ থেকে ২৭ দিনের মধ্যে তা তুলে শুকানো হয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যে সেগুলো বিক্রি করা হয়। কাঁচা ৩০০ ও শুকনো ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। তাঁদের নির্দিষ্ট কয়েকজন ক্রেতা আছেন, যাঁদের কাছে শুকনা মাশরুম পৌঁছে দেন।

দুই উদ্যোক্তার দেওয়া তথ্যমতে, মাশরুম বিক্রির উপযোগী করতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ১ লাখ ৫ হাজার টাকায়। আয় দিয়ে সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি নিজেদের ও সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যয় বহন করছেন। এখন তাপমাত্রা বেশি থাকায় চাষাবাদ করতে সমস্যা হচ্ছে। গরমে বছরের তিন মাস চাষাবাদ বন্ধ রাখতে হয়। এ সময় আর্দ্রতা উপযোগী না থাকায় চাষ করা যায় না। বর্ষা ও শীতকাল মাশরুম চাষের উপযোগী।

আল্পনা খাতুন বলেন, মাশরুম চাষে পরিবারের সদস্যরা সহযোগিতা করেন। তাঁর ননদ শিল্পী ব্যবসার অংশীদার। তাঁরা মিলেমিশে চাষ করেন। সুবিধাও ভোগ করেন সমানভাবে। এর মাধ্যমে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছেন। স্বামীদের টাকার ওপর তাঁদের ভরসা করতে হয় না। ঘরে বসে এভাবে আয় করা যায়, আগে কখনো ভাবেননি।

শখের বসে মাশরুম চাষ করে এখন নিজেরা উদ্যোক্তা বলে মন্তব্য করেন শিল্পী খাতুন। তিনি বলেন, তাঁদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। এ জন্য উৎপাদন একটু কম হয়। আড়াই কেজি সিলিন্ডারে সর্বোচ্চ এক কেজি মাশরুম পাওয়া যায়। প্রশিক্ষণ পেলে হয়তো বাড়ত। উপজেলা কৃষি কার্যালয় পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি খোঁজখবর নেয়। তাঁদের মতো অন্য নারীরা মাশরুম চাষে এগিয়ে আসুক, এটাই তাঁরা চান।

আল্পনা ও শিল্পী বাগমারার প্রথম ও একমাত্র মাশরুমচাষি বলে জানালেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ননদ-ভাবির উদ্যোগ ব্যতিক্রম ও অনুকরণীয়। তাঁরাই বাগমারার প্রথম মাশরুমচাষি। তাঁদের দেখে অন্যরা এগিয়ে আসবেন বলে তিনি মনে করেন।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুতে গ্রামের লোকজন ব্যাঙের ছাতা বানাচ্ছে বলে দুই নারীকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করতেন। এখন অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’