মৌলভীবাজারে এক নাগরিক সংবর্ধনায় বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শুক্রবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারে এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ‘পৃথিবী তার সবুজ দিয়ে, বৃক্ষ দিয়ে আমাদের ভালোবেসেছিল। পরিবর্তে আমরা তাকে দিয়েছি যুদ্ধের দাবানল। স্মরণকালের ভয়াবহ এই যে তাপপ্রবাহ, প্রকৃতি এইভাবে তার নিয়মে প্রতিশোধ নিচ্ছে। সৌন্দর্যের এই জেলায় (মৌলভীবাজারে) বলতে চাই, আসুন প্রকৃতিকে ভালোবাসি। বৃক্ষরোপণের বিকল্প নাই।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতির মৌলভীবাজার আগমন উপলক্ষে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে মৌলভীবাজার পৌরসভা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী, সুস্থ-সুন্দর পরিবেশ রেখে যেতে না পারলে একদিন তারা (আগামী প্রজন্ম) আমাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। হয়তো সেদিন আমরা থাকব না। কিন্তু তাতে ইতিহাসের মহাস্রোতে দায়মুক্তি পাব কি! এ ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। স্ব-স্ব জেলায় প্রাকৃতিক সম্পদ, বনাঞ্চল, পাহাড়, জলাভূমি-জলাশয়, নদ-নদী, স্বাভাবিক প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. জসীম উদ্দীনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ জেলা ও দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর, প্রধান বিচারপতির স্ত্রী নাফিসা বানু, জেলা প্রশাসক ঊর্মি বিনতে সালাম, পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কামাল উদ্দিন চৌধুরী, কুলাউড়া পৌরসভার মেয়র মো. সিপার উদ্দিন, মৌলভীবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. কামাল হোসেন প্রমুখ।

সমাজের সব স্তরে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে জেলা-উপজেলা, থানা-গ্রাম, এমনকি পাড়া-মহল্লায় নাগরিক সচেতনতার বিকল্প নেই। নাগরিক অধিকার ও দায়িত্বের যৌথ প্রক্রিয়া প্রয়োগে সবার আগে দরকার সচেতনতা ও শিক্ষা। প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের লক্ষ্যে নিজেদের নানা আয়োজন করতে হবে। রাজধানীকে এর সঙ্গে যুক্ত করবেন। দেশের অন্য জেলার সঙ্গে আয়োজনকে ভাগ করে নেবেন।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘মানুষের জন্য ন্যায়বিচারভিত্তিক ও শোষণমুক্ত জীবনমান চাওয়া আমাদের কর্তব্য। নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষ হিসেবে কতটুকু ন্যায়বিচার করতে পেরেছি, সেটাই দেখার বিষয়। আমরা বিচারকের আসনে বসে বিচার করি। কিন্তু বিচারের অর্থ হচ্ছে, প্রত্যেক পরিবারে, প্রত্যেক সমাজে ন্যায়বিচার করা। এ জন্য ন্যায়বিচারক হওয়া খুব জরুরি। সেটা আপনি যে স্তরেই থাকুন না কেন। বিচারকের ওপর দায়িত্ব প্রথাগত বিচার করা। এ ক্ষেত্রে নির্মোহ বিচার করতে হবে।...বিধিবদ্ধ আইন কেবল রোগের লক্ষণের সমাধান দেয়। কিন্তু রোগের সমাধান নিহিত নৈতিক বোধের মধ্যে। অপরাধ কখন হয়? যখন আমাদের ভেতরে মনুষ্যত্ব মরে যায়।’

সবশেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এর আগে বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার জন্য নির্মিত ন্যায়কুঞ্জের উদ্বোধন করেন প্রধান বিচারপতি।