শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক না আসায় সহপাঠীদের উপস্থিতি লিপিবদ্ধ করছে এক ছাত্রী। আজ রোববার রাজশাহী নগরের নওদাপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি রাজশাহী: কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে রাজশাহী নগরের নওদাপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে সাতজন শিক্ষক আজ রোববার ক্লাস বর্জন করেছেন। শ্রেণি প্রতিনিধিরা তাদের ক্লাস সামলিয়েছে। আর ওই শিক্ষকেরা অফিস কক্ষে বসেছিলেন। ফলে বিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। খবর পেয়ে রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক বিদ্যালয়ে ছুটে যান। কিন্তু সংকটের কোনো সুরাহা হয়নি।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে ২৪ দিন ধরে তালা ঝুলছে। তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গত শনিবার সাত সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। তাঁরা নোটিশ গ্রহণ করেননি।
বিদ্যালয়টি রাজশাহী নগরের সপুরা এলাকায় অবস্থিত। গত ২৪ এপ্রিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোন্দকার নাহিদা নাসরিনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে সহকারী প্রধান শিক্ষক লতিফা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২৬ এপ্রিল থেকে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে তালা ঝুলছে।
আরও পড়ুন
প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে ২৩ দিন ধরে তালা |
আজ রোববার ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সাত শিক্ষক তাঁদের কার্যালয়ে বসে আছেন। আর শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের ভূমিকায় দাঁড়িয়ে উপস্থিতি লিপিবদ্ধ করছে, কেউ আবার শিক্ষকের জায়গায় দাঁড়িয়ে সহপাঠীদের শান্ত করার চেষ্টা করছে।
সপ্তম শ্রেণির প্রতিনিধি বলে, ‘ক্লাস টিচার স্যার আসেননি। তাই ম্যাডাম আমাকে রোলকল করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি রোলকল করেছি।’ সে জানায়, আজ তাদের শুধু একটি ক্লাস হয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বসে হইচই করছিল। তাদের শান্ত করার জন্য শ্রেণি প্রতিনিধি শিক্ষকের দাঁড়ানোর জায়গায় দাঁড়িয়ে সহপাঠীদের উদ্দেশে কথা বলছিল। সে জানায়, শিক্ষক না আসায় সে নিজে অন্য সহপাঠীদের শান্ত করার চেষ্টা করছে।
অষ্টম শ্রেণির ক্লাসে গিয়ে দেখা যায়, শ্রেণি প্রতিনিধি নিজেই উপস্থিতি লিপিবদ্ধ করছে। সে জানায়, শ্রেণি শিক্ষক তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন।
শিক্ষকদের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তাঁরা সেখানে আছেন। শ্রেণিকক্ষে না যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে একজন শিক্ষক বলেন, সেটা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলতে পারবেন। তাকে কেউ জিজ্ঞেস করুন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগের কমিটির মেয়াদ থাকতেই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড গত ২২ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহেদুন নবীকে সভাপতি করে নতুন কমিটির অনুমোদন দেয়। অথচ আগের কমিটির মেয়াদ ছিল ১৫ মে পর্যন্ত। পরে শিক্ষা বোর্ড থেকে একটি সংশোধনী দিয়ে বলা হয়, নতুন কমিটি ১৬ মে থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু তার আগেই আগের কমিটির সভাপতি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক সভাপতি রমজান আলী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ছয় মাসের জন্য আদালত নতুন কমিটির ওপর স্থগিতাদেশ দেন, অর্থাৎ তত দিন পর্যন্ত আগের কমিটিই কাজ করবে।
ওই সাত শিক্ষকের ক্লাস না নেওয়ার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রমজান আলী বলেন, ‘আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি। আইনে যা হয় হবে, কিন্তু তাঁরা ক্লাস করবেন না কেন? আগের দিনও তাঁরা ক্লাস না করে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাইরে ছিলেন। এটা হতে পারে না। তাঁদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা জবাব দেবেন।’
সহকারী প্রধান শিক্ষক লতিফা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের ক্লাস ফেলে সাতজন সহকারী শিক্ষক গত শনিবার বাইরে গিয়েছিলেন। এই অনুমোদনহীন অনুপস্থিতির কারণে তাঁদের কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন তিনি। আজ রোববার তাঁরা বিদ্যালয়ে থাকলেও ক্লাস করছেন না। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা দেওয়ার বিষয়ে লতিফা খাতুন বলেন, প্রধান শিক্ষক নিজেই তাঁর কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে গেছেন। চাবিও তাঁর কাছে আছে। তিনি চাইলে খুলে বসতে পারেন।
রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, তিনি ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। প্রথমত, তাঁরা একাডেমিক দিকটা দেখছেন, যাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কোনো ক্ষতি না হয়। আর ওই সাত শিক্ষককে তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ক্লাস না করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ক্লাসের তদারকি করার জন্য সোমবার থেকে প্রতিদিন তিনি শিক্ষা অফিস থেকে একজন করে কর্মকর্তা পাঠাবেন। আর কমিটির বিষয়ে শিক্ষকদের ভাবতে হবে না।