রাজশাহী জেলার মানচিত্র |
প্রতিনিধি রাজশাহী: কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে রাজশাহী নগরের নওদাপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে ২৩ দিন ধরে তালা ঝুলছে। তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। যাঁকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করা হয়েছে, তিনি সাত সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছেন। এমন অবস্থায় বিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে।
রাজশাহী নগরের সপুরা এলাকায় অবস্থিত বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক খোন্দকার নাহিদা নাসরিন। গত ২৫ এপ্রিল প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে সহকারী প্রধান শিক্ষক লতিফা খাতুনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল শনিবার বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে বাইরে যাওয়ার অভিযোগে সাত সহকারী শিক্ষককে শোকজ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লতিফা খাতুন। তবে শিক্ষকেরা কেউ নোটিশ গ্রহণ করেননি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগের কমিটির মেয়াদ থাকতেই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড গত ২২ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. ওয়াহেদুন নবীকে সভাপতি করে নতুন কমিটি অনুমোদন করে দেয়। অথচ আগের কমিটির মেয়াদ ছিল ১৫ মে পর্যন্ত। পরে শিক্ষা বোর্ড থেকে একটি সংশোধনী দিয়ে বলা হয়, নতুন কমিটি ১৬ মে থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু তার আগেই আগের কমিটির সভাপতি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাবেক সভাপতি রমজান আলী হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ছয় মাসের জন্য আদালত নতুন কিমিটির ওপরে স্থগিতাদেশ দেয়, অর্থাৎ তত দিন পর্যন্ত আগের কমিটিই কাজ করবে।
২৬ এপ্রিল নতুন কমিটির পরিচিতি সভা হওয়ার কথা ছিল। প্রধান শিক্ষক নাহিদা নাসরিন ওই কমিটির সদস্যদের নিয়ে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেন, তাঁর কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। তিনি জানতে পারেন, আগের কমিটি তাঁকে বরখাস্ত করেছে। তিনি থানা-পুলিশ করেও সুবিধা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত নতুন কমিটির লোকজন নিয়ে ফিরে আসেন তিনি। এতে পরিচিতি সভা আর হয়নি। পুরোনো কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ১৬ মে আবার নতুন কমিটির সভাপতিকে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান নাহিদা। সেদিন জানতে পারেন, নতুন কমিটির ওপরে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রধান শিক্ষক লতিফা খাতুন বলেন, প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের একটি চাবি প্রধান শিক্ষকের কাছেই রয়েছে। তিনি ওই চাবি দিয়ে ঘর খুলে বসতে চাইলে বসতে পারেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সেই চাবি দিয়ে ঘর খুলতে চান না। তিনি তাঁর (সহকারী প্রধান শিক্ষকের) কাছে থাকা চাবি চান।
আগের কমিটির সভাপতি রমজান আলী বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাহিদা নাসরিন তাঁর (রজমান আলীর) স্বাক্ষর জাল করে গত মার্চ মাসের বেতন তুলেছেন, কিন্তু বৈশাখী ভাতা তিনি আটকে দিয়েছেন। তাঁর সন্দেহ হয়েছে, প্রধান শিক্ষক যদি তাঁর স্বাক্ষর জাল করে বেতন ওঠাতে পারেন, তাহলে ব্যাংক হিসাবের টাকাও নয়ছয় করতে পারেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি ২৫ এপ্রিল প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছেন তিনি।
নতুন কমিটির সভাপতি মো. ওয়াহেদুন নবীর ভাষ্য, প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ে তালাটা খুলে দেওয়ার জন্য তিনি সভাপতি রমজান আলীকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। রমজান আলী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে কার্যালয় খুলে দেওয়ার জন্য বললেন, কিন্তু তিনি খুলে দিলেন না।
সাময়িক বরখাস্ত প্রধান শিক্ষক নাহিদা নাসরিন বলেন, এ বিষয়ে এখন আর কোনো কথা বলতে চান না। তাঁর নামে আদালতে মামলা হওয়ার কথা শুনেছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র পাননি।