রাজশাহী মেডিকেলের এক লিফট থেকেই অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের চেষ্টা

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মাণাধীন নতুন আইসিইউ ইউনিটের একটি লিফট থেকেই প্রায় ৫০ লাখ টাকা মারতে চেয়েছিলেন এক ঠিকাদার। জালিয়াতি ধরা পড়ার পর আজ মঙ্গলবার তাঁকে ওই লিফট অপসারণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ ক্যাটাগরির লিফট। কিন্তু ঠিকাদার লাগান ‘সি’ ক্যাটাগরির। দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

অনিয়ম নিয়ে ‘ঠিকাদারের বিরুদ্ধে লিফট স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নির্মাণাধীন আইসিইউ ইউনিটে লাগানো লিফট দরপত্র অনুযায়ী সঠিক স্পেসিফিকেশনের কি না, তা যাচাই করতে রাজশাহী গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল সোমবার ওই প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল গোফফার বলেন, দরপত্রে এ ক্যাটাগরির লিফট চাওয়া হয়েছিল। জাপানে ‘এ’ ক্যাটাগরির ফুজি লিফট তৈরি করে। সরবরাহ করা লিফটের গায়েও ফুজির স্টিকার আছে। কিন্তু এর সপক্ষে তদন্ত কমিটির কাছে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ঠিকাদার। ধারণা করা হচ্ছে, চীনেও ফুজির কারখানা আছে। সেগুলো ‘সি’ ক্যাটাগরির। ‘এ’ ক্যাটাগরির দাম ১ কোটি ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৪৯৮ টাকা। সি ক্যাটাগরির দাম ৬০ লাখ টাকা।

আবদুল গোফফার আরও বলেন, দরপত্রে তাঁরা ২০ হর্সের লিফট চেয়েছিলেন। কিন্তু লাগানো হয়েছে ১০ হর্সের। এ জন্য ১০ তলা ভবনের উচ্চতা অনুযায়ী লিফটের যে গতি থাকার কথা ছিল, এই লিফটের সেই গতি নেই। যদিও ভবন পাঁচতলা। পরে ১০ তলা করা হবে। লিফটের সক্ষমতা তো ১০ তলারই হতে হবে।

তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লিফট অপসারণের জন্য ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম বলেন, আজ বিকেলে ঠিকাদারের মেইলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লিফট সরবরাহ না করায় সাত দিনের মধ্যে লিফট অপসারণ করতে বলা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাংশে পাঁচতলায় নতুন করে আইসিইউ ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছে। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। কাজ পান ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসেন। ইউনিটে তিনটি স্মার্ট দরজা লাগানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার তিনটি কাঠের দরজা লাগান। হাসপাতাল থেকে আপত্তি জানালে দরজা তিনটি পাল্টে কাচের করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী নতুন আইসিইউ ইউনিটে বেড কাম প্যাসেঞ্জার লিফট লাগানোর কথা ছিল। ঠিকাদার বেড লিফট না লাগিয়ে প্যাসেঞ্জারস লিফট লাগিয়ে দেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আপত্তির পর সেটা ঠিক করে দেওয়া হলেও স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লিফট সরবরাহ করা হয়নি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও ঠিকাদার সৈয়দ জাকির হোসেন ফোন ধরেননি। আগের দিন সোমবার সন্ধ্যায় ফোন করলে তিনি  বলেছিলেন, তিনি লিফট অপসারণের ব্যাপারে তখনো কোনো নির্দেশনা পাননি। সমস্যা থাকলে সমাধান করা হবে।