রাজশাহী জেলার মানচিত্র

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীর এক কিশোরকে (১৬) তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের চার সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। আজ রোববার বিকেলে তাঁদের রাজশাহী পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

প্রত্যাহার করা পুলিশের ওই চার সদস্য হলেন গোদাগাড়ী প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রেজাউল করিম, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আনোয়ারুল ইসলাম, কনস্টেবল মো. রেজাউল করিম ও মিলন হোসেন।

শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম গ্রাম থেকে ওই কিশোরকে তুলে নিয়ে যান কয়েকজন। ওই কিশোরকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই কিশোরের বাড়ি গোগ্রাম গ্রামে। তার নাম মো. সোহানুর রহমান। তার বাবা মো. মুর্ত্তজা একজন কাপড় ব্যবসায়ী।

ওই কিশোর ও স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাত আটটার দিকে সোহানুর রহমান তার বাবার কাপড়ের দোকান বন্ধ করে। পরে সে তার দুই বন্ধুর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এই সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন তাদের সামনে আসেন। তাঁরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের তিনজনের মুঠোফোন নিয়ে নেন। এরপর তাঁরা জোর করে সোহানুরকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে চলে যান। রাত ৯টার দিকে তার হাতে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর তাকে প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের পাশে পদ্মা নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ সময় তাঁরা তাকে বলেন, ‘তোর বাপকে ফোন দিয়ে টাকা আনতে বল, নইলে মাদক মামলায় চালান দিয়ে দিব।’ এই সময় সোহানুর রহমানের মুঠোফোনে তার মা-বাবার মুঠোফোন থেকে বারবার ফোন আসছিল। কিন্তু তাঁরা তাকে তার মা-বাবার ফোনে কথা বলতে দেননি। এরপর রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার বসন্তপুরে ফাঁকা রাস্তার পাশে নামিয়ে দেন। পরে ওই কিশোর একা গোগ্রাম বাজারে চলে যায়।

সোহানুর রহমান মুঠোফোনে বলে, তাঁদের আচরণ একেবারে পুলিশের মতো। তাঁদের পরনে পুলিশের কোনো পোশাক ছিল না। বারবার ফোন আসছিল আর ‘স্যার স্যার’ বলছিলেন। তাঁদের একজনের হাতে থাকা হাতকড়া তাকে পরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁরা তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে গাড়ি এনে থানায় নিয়ে চালান দিয়ে দেবেন বলেও তাঁরা তাকে হুমকি দেন। সে ভয় না পেয়ে তাদের সঙ্গে থানায় যেতে চায়। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
সোহানুর আরও বলেন, ওই চারজন তার মুঠোফোনে থাকা বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে পিন নম্বর নিয়ে তার সামনেই তিন হাজারের মতো টাকা তুলে নেন। তাকে ছেড়ে দেওয়ার আগেই দুজন পুলিশ সদস্য সেখান থেকে চলে যান। বাকি দুজন তাকে ফাঁকা রাস্তায় নামিয়ে দেন।

সোহানুর রহমানকে পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায়  সোহানুরের পরিবার তাকে খুঁজতে থাকে। থানা-পুলিশকেও ফোন করা হয়। এ সময় এএসআই আনোয়ারুলকে সাদাপোশাকে গোগ্রাম বাজারে দেখতে পান স্থানীয় মানুষেরা। স্থানীয় লোকজন তাঁর কাছে সোহানুরের বিষয়ে জানতে চান।

একপর্যায়ে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে অবরুদ্ধ করেন। পরে খবর পেয়ে প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসমান গণি অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়েই স্থানীয় লোকজনকে লাঠিপেটা করেন তিনি। এতে সাত–আটজন আহত হন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন লোকজন। পরে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আবদুল মতিন ও গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সোহেল রানা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এএসআই আনোয়ারুলকে নিয়ে চলে যান।

সোহানুর রহমানকে তুলে নিয়ে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে এএসআই আনোয়ারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এই ঘটনার পর তাঁকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। প্রাথমিকভাবে চারজনকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার তদন্ত চলছে।