বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবা নাসরিন | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি বগুড়া: চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও বঁটি কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচিত ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী মাহবুবা নাসরিন ওরফে রূপা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারাতে যাচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের পর ফলাফলে দেখা যায়, তিনি পরাজিত হয়েছেন।

বগুড়ার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী, প্রার্থীকে জামানত ফেরত পেতে মোট প্রদত্ত ভোটের নূন্যতম ১৫ শতাংশ পেতে হবে। দুপচাঁচিয়ায় ভোট পড়েছে ৬৮ হাজার ৫৪৪টি। জামানত ফেরত পেতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে ন্যূনতম ১০ হাজার ২৮১ ভোট পেতে হবে। কাপ-পিরিচ প্রতীকে মাহবুবা নাসরিন ৭ হাজার ১৫০ ভোট পেয়েছেন। ফলে তিনি জামানত হারাতে যাচ্ছেন।

নির্বাচন কর্মকর্তা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকালের নির্বাচনে এখানে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আহম্মেদুর রহমান। তিনি মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে ৩৭ হাজার ৫৪৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ফজলুল হক প্রামাণিক আনারস প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২০ হাজার ৪২৯ ভোট।

চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে আড়াই বছর আগে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মাহবুবা নাসরিন। এ ঘটনায় দল থেকে সাময়িক বহিষ্কারের পর তিনি দুপচাঁচিয়া উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হন। এ ছাড়া ইডেন মহিলা কলেজে ‘সিট বাণিজ্য’ ও ছাত্রলীগের এক পক্ষের ওপর হামলায় জড়ানোর অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

মাহবুবা নাসরিন ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন। যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে থাকার সময় ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর কলেজের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ‘সিট বাণিজ্য’কে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তখন কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য সাবিকুন্নাহার তামান্নার ওপর হামলা চালিয়ে বঁটি দিয়ে কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ ওঠে মাহবুবা নাসরিনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পরপরই ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

মাহবুবা নাসরিন ২০১৯ সালে দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্যপদ পান।

২০২২ সালের ২১ জানুয়ারি প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ে অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা মাহবুবা নাসরিনকে তেজগাঁও এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস, মুঠোফোন, অডিটর পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয় বলে জানানো হয়। এ ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে ২৩ জানুয়ারি বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ থেকে মাহবুবাকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। এক দিন পর মাহবুবাকে উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। ওই বছরের ৫ জুন ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে মাহবুবাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতিতে জড়িত। ‘অডিটর’ নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১৮ প্রার্থীর সঙ্গে চুক্তি করেছিল চক্রটি। এর মধ্যে মাহবুবা নাসরিনের ছোট ভাই রানাও আছেন। ২৪ জানুয়ারি ডিবি গুলশান বিভাগের উপপরিদর্শক শহিদুর রহমান রাজধানীর রমনা মডেল থানায় মাহবুবা নাসরিনসহ সহযোগীদের আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। দুই দফায় ছয় দিনের রিমান্ড শেষে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মাহবুবা নাসরিন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

মামলাটির তদন্ত শেষে গত বছরের ৪ জুন তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মাকারিয়াস দাস আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে মাহবুবা নাসরিনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরে মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে আদালতে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনাল মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন। সিআইডির পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ তদন্ত শেষে মাহবুবাকে অব্যাহতি দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।