বাগমারায় বরজে আগুন: জীবিকার অবলম্বন হারিয়ে ৬৪ পানচাষির হাহাকার

পুড়ে যাওয়া পানের বরজের সামনে নির্বাক দাঁড়িয়ে আছেন এক কৃষক। গতকাল সোমবার রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পোড়াকয়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বাগমারা: বাড়ির পাশে ২০ শতক জমিতে পানের বরজ ছিল আবদুস সাত্তারের। এই বরজের আয় দিয়েই সংসার চালাতেন তিনি। তাঁর ছেলে রাজশাহী শহরে থেকে লেখাপড়া করেন। এখন তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। গত শুক্রবার আগুনে পুড়ে গেছে তাঁদের আয়ের একমাত্র উৎস পানের বরজ।

আবদুস সাত্তারের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার পোড়াকয়া গ্রামে। গত শুক্রবার ওই গ্রামে আবদুস সাত্তারসহ ৬৪ জন পানচাষির বরজ পুড়ে গেছে। জীবিকার অবলম্বন হারিয়ে এখন তাঁরা সবাই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

 সোমবার বিকেলে পোড়াকয়া গ্রামে গিয়ে পুড়ে যাওয়া পানের বরজ দেখা যায়। এখনো বাতাসে ভেসে আসছে পোড়া গন্ধ। পোড়াকয়া গ্রামের প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে পানের বরজ ছিল। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সবকিছু পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পানবরজের পাশেই আধা পাকা ধানখেত। সাত বিঘা ধানখেতও পুড়ে গেছে।

পুড়ে যাওয়া পানবরজের সামনে দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন আবুল কালাম। তিনি জানান, তাঁর ৬০ শতক পানবরজের সবটাই পুড়ে গেছে। সংসারের খরচ অনায়াসে চলত পানবরজের আয় থেকে। এখন কী করবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘পানবরজ তৈরি করতে লাগলে নতুন কইরা বাঁশ, দড়ি, খড় কেনা লাগবে। পাইট (শ্রমিক) লাগবে, এত টাকা কুনটে পাব। বরজে নতুন কইরা পান আনতে এক বছর সময় লাগবে। কমপক্ষে তিন লাখ টাকা লাগবে, সে টাকাও নেই।’

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত চাষি সফির উদ্দিন বলেন, ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো পথ দেখছেন না। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পানচাষ করেছিলেন। এখন ঋণের কিস্তি নিয়ে চিন্তায় আছেন।

চাষি আবদুস সাত্তারের ছেলে আলামিন (১৮) জানান, তিনি রাজশাহী শহরে লেখাপড়া করেন। বাবার পান বিক্রির টাকায় চলে লেখাপড়ার খরচ। সামনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পান বরজ পুড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে বাড়িতে এসেছেন। আর শহরে যাওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ একটি বরজে আগুনের সূত্রপাত হয়। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের ধারণা বিড়ির আগুন থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। উপজেলা প্রশাসনের তদন্তেও বিড়ির আগুন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রমাণ মিলেছে। ৬৪ জন চাষির সবাই নিঃস্ব। তাঁদের ঘুরে দাঁড়াতে এক বছর সময় লাগবে। পাশাপাশি অতিরিক্ত প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। সরকারি সহযোগিতার দাবি জানান তাঁরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক জানান, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাঁদের সহযোগিতার প্রয়োজন।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সহযোগিতার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।