‘নোঙর ট্রাস্টের’ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
কূটনৈতিক প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, বালুখেকো, নদীখেকোসহ যারা শিল্পকারখানার বর্জ্য, রাসায়নিক নদীতে ফেলেন, তাঁরা দেশ ও সমাজের শত্রু। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে নদী ও পরিবেশ রক্ষাবিষয়ক সংগঠন ‘নোঙর ট্রাস্ট’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশের নৌপথে নিহত সব ব্যক্তির স্মরণে ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণার দাবি ও ঢাকা নদী সম্মেলনের প্রস্তুতি সভা নিয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
মেয়াদোত্তীর্ণ নৌপরিবহন এবং অতি মুনাফালোভী মালিকদের অতিরিক্ত যাত্রী বহনই অধিকাংশ নৌ–দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
বক্তব্যে নদী রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের নদ-নদী দেশের প্রাণবাহী শিরা-উপশিরার সমান। দেশের পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষায় নদী রক্ষার বিকল্প নেই। তাই নদীকে ভালোবাসুন, নদী রক্ষায় ব্রতী হোন।’
নদী দখলের তীব্র সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রথম পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এক দশক দায়িত্ব পালনকারী হাছান মাহমুদ বলেন, বিত্তের ক্ষমতা অনেক সময় পদের ক্ষমতাকেও নিয়ন্ত্রণ করে। বিত্তবানরা আবার নিজেদের সুবিধার জন্য মিডিয়া লালন করে। ক্ষমতাবানেরা নদী দখল করে। বুড়িগঙ্গা নদীর দুপাশে পাড় বাঁধাই করা হয়েছে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। তবুও বুড়িগঙ্গা দখল হচ্ছে।
আঞ্চলিক নদী সহযোগিতা বিষয়েও মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, নদী রক্ষা এবং সুষম পানিবণ্টনে আরও সমন্বয়, প্রচেষ্টা ও আঞ্চলিক উদ্যোগ দরকার ছিল। সুষমভাবে পানিবণ্টন নিশ্চিত করার জন্য আঞ্চলিক পদক্ষেপ প্রয়োজন। একটি আঞ্চলিক সহযোগিতা দাঁড় করানো গেলে সবার উপকার হবে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা অববাহিকা নিয়ে একটি আঞ্চলিক সহযোগিতার ফোরাম খুব প্রয়োজন।
নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামসের সভাপতিত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আওলাদ হোসেন, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, রিভারাইন পিপল সংগঠনের মহাসচিব শেখ রোকন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।
গত ৫৩ বছরে দেশে নৌ দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। ২০০৪ সালের ২৩ মে একই রাতে মেঘনা নদীতে এমভি লাইটিং সান, এমভি দিগন্ত ও এমভি মজলিশপুর নামের তিনটি জাহাজডুবিতে ব্যাপক প্রাণহানি হয়। তাই নদী ও নদী নিরাপত্তার শপথে ২৩ মে জাতীয় নদী দিবস ঘোষণার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে 'নোঙর'। আজকের সভায় উপস্থিত অতিথিরা নোঙরের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন।
নোঙর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সুমন শামস জানান, ২০০৪ সালের ২৩ মে জাহাজডুবিতে তাঁর মা আছিয়া খাতুন মেঘনায় মারা যান। স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত এই দিনকে জাতীয় নদী দিবস পালনের দাবি অব্যাহত রাখবে ‘নোঙর’।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মিশন পুরো বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয়, তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়।’