জাতীয় পরিচয়পত্র | প্রতীকী ছবি |
রিয়াদুল করিম: বঙ্গবন্ধুর খুনি রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের ছয় সন্তান তাঁদের বাবার নাম পরিবর্তন করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) এ তথ্য জানিয়ে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এনআইডি নিবন্ধনের কাজটি করে থাকে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডি উইং)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে এনআইডি উইং।
ইসি সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠিটি গত সোমবার ইসিতে আসে। এতে ইসির এনআইডি শাখাকে জানানো হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী ও ১৯৭৫ সালে জেল হত্যা মামলার আসামি রিসালদার মোসলেম উদ্দিন তাঁর নাম পরিবর্তন করে মো. রফিকুল ইসলাম খান নামে পরিচিত হয়েছেন।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) জানিয়েছে, তিনি পলাতক রয়েছেন। তাঁর ছয় ছেলে-মেয়ে তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম রিসালদার মোসলেম উদ্দিন পরিবর্তন করে মো. রফিকুল ইসলাম খান উল্লেখ করেছেন। এই জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তিনজন ইতিমধ্যে তাঁদের পাসপোর্টে এবং আরেকজন ড্রাইভিং লাইসেন্সে বাবার পরিবর্তিত নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের সন্তানদের জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং অন্যান্য জাতীয় ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) বাবার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া চিঠিতে মোসলেম উদ্দিনের ছয় সন্তানের নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান, মাহমুদুল ইসলাম খান, মজিদুল ইসলাম খান, মো. মহিদুল ইসলাম খান, মো. সাজিদুল ইসলাম খান এবং সানাজ খাঁন। এর মধ্যে শফিকুল, মহিদুল ও সানাজ তাঁদের পাসপোর্টেও বাবার নাম পরিবর্তন করেছেন। আর মাহমুদুল ইসলাম তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্সে বাবার নাম পরিবর্তন করেছেন বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, তাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেওয়া অথবা তথ্য গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। কোনো ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করলে বা জ্ঞাতসারে ওই জাতীয় পরিচয়পত্র বহন করলে তিনি সাত বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কোনো ব্যক্তি পরিচয়পত্র জাল করার কাজে সহায়তা করলে তাঁরও সাজা সাত বছর কারাদণ্ড এবং অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যা করেন সেনাবাহিনীর বিপথগামী কিছু সদস্য। বিদেশে থাকায় শুধু বেঁচে যান তাঁর দুই মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। খুনিদের দায়মুক্তি দিতে আইনও করা হয়েছিল। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার শুরু করে।
১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল এই মামলায় ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় দেন। পরে উচ্চ আদালত ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আরেক খুনি আজিজ পাশা ২০০১ সালের জুনে জিম্বাবুয়েতে মারা যান।
পলাতক খুনিদের মধ্যে আবদুল মাজেদকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল রাজধানীর গাবতলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। কয়েক দিন পরেই (১১ এপ্রিল রাতে) তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। পলাতক খুনিদের মধ্যে এম বি নূর চৌধুরী কানাডায় এবং রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে পালিয়ে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য তিন খুনি খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে সরকারের কাছে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।