ফাইল ছবি

ফয়জুল্লাহ: কোরবানির ঈদের বাকি আরও প্রায় দেড় মাস। এর মধ্যেই মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে এলাচির দাম বাড়ছে লাফিয়ে। এ ছাড়া অন্যান্য মসলার মধ্যে দারুচিনি, লবঙ্গ, ধনে, তেজপাতা, শুকনা মরিচ ও হলুদের দামও গত বছরের তুলনায় বাড়তি। কোরবানির ঈদে মসলার চাহিদা বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। তাই কোরবানিকে সামনে রেখে আগেভাগেই বাজারে মসলার দাম বেড়ে গেছে।

মসলার পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে এলাচির দাম। দুই মাস আগে প্রতি কেজি এলাচির দাম ছিল ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। খুচরায় এখন তা বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এলাচির দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি। এলাচির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আমদানিকারকেরা বলছেন, বিদেশে এলাচির দাম বেড়েছে। এ ছাড়া ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি খরচও বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন, আমদানি করা এলাচি কয়েক হাত বদলের পর খুচরায় এসে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে। আমদানিকারক থেকে নিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী এলাচি মজুত করে বেশি মুনাফা করছেন।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত বুধবারের বাজারদরের তালিকানুযায়ী, ছোট আকারের এলাচির খুচরা দাম কেজি প্রতি ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এক বছর আগে (গত কোরবানির ঈদ বাজারে) ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বাজারে এলাচির দাম বেড়েছে ৬২ শতাংশ। বাজারে বড় আকারের এলাচির দাম আরেকটু বেশি। খুচরা বাজারে বড় আকারের প্রতি কেজি এলাচি সর্বোচ্চ ৪ হাজার ২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের শাহ মিরান স্টোরের বিক্রেতা মামুন হোসেন বলেন, দেশের সব ধরনের মসলার চাহিদা মেটানো হয় আমদানি করেই। ডলারের দাম বাড়ার পর থেকে তাই মসলার দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচির দাম।

অন্য মসলার মধ্যে টিসিবির তালিকা অনুযায়ী, বাজারে প্রতি কেজি দারুচিনির দাম এখন ৫০০–৫৮০ টাকা। এক বছর আগে যা ছিল ৪৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫২০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১১ শতাংশ। বর্তমানে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। গত বছরের এই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে লবঙ্গের দাম বেড়েছে ১৭ শতাংশ। বাজারে ধনের কেজি এখন ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। এক বছর আগে ছিল ১৩০–১৬০ টাকা। সেই হিসাবে ধনের দাম এক বছরে বেড়েছে ৫২ শতাংশ। প্রতি কেজি তেজপাতার দাম এখন ১৫০–২০০ টাকা। গত বছরের তুলনায় যা ২৫ শতাংশ বেশি।

টিসিবির বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, প্রতি কেজি জিরার দাম এখন বাজারে সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকা। গত বছরে একই সময়ে যা ছিল সর্বোচ্চ
৮০০ টাকা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জিরার দাম ছয় মাস আগে আরও বেশি ছিল। তখন প্রতি কেজি জিরার দাম হাজার টাকা ছাড়িয়ে
গিয়েছিল। সেখান থেকে কিছুটা কমেছে। তবে বছর দুয়েক আগেও ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি জিরার দাম ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। সেই পরিস্থিতিতে ফেরার মতো অবস্থা এখনো হয়নি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

এদিকে বাজারে হলুদ ও শুকনা মরিচের মতো পণ্যের দামও গত বছরের তুলনায় বাড়তি। এই দুটি মসলাজাতীয় পণ্য দেশেও কিছুটা উৎপাদন হয়। তাই পণ্য দুটির বাজার পুরোপুরি আমদানিনির্ভর বলা যাবে না। দেশে উৎপাদিত হলেও হলুদ ও শুকনা মরিচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি হয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

টিসিবির হিসাবে, বাজারে প্রতি কেজি আমদানি করা শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪৪০–৫০০ টাকায়। গত বছর এই সময়ে দাম ছিল ৪২০–৪৬০ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। আর আমদানি করা হলুদের দাম গত বছর ছিল প্রতি কেজি ১৯০–১৩০ টাকা। এবার তা বেড়ে হয়েছে ২৮০–৩৫০ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।

এলাচি বাদে অন্যান্য মসলার দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ পাইকারি গরমমসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, ভারতে খরার কারণে এলাচির আমদানি খরচ বেড়েছে। আমদানির অন্যান্য উৎসেও দাম বেশি। তাতে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। আমদানিকারকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আমদানি করা সব ধরনের মসলার দাম। তবে বাজার অস্থিতিশীল বলা যাবে না। আমদানি অব্যাহত আছে। যদি শুল্কায়নের ক্ষেত্রে বছরব্যাপী একই নীতি অনুসরণ করা যায়, তাহলে মসলার বাজার আরও স্থিতিশীল হবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

আমদানির তথ্য ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পেঁয়াজ, আদা ও রসুন ছাড়া দেশে মসলার বার্ষিক বাজার এখন ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এই বাজারের বড় অংশই আমদানিনির্ভর।