সৈয়দ আমানুল্লাহ। সিএমএম আদালতে নেওয়ার সময় ছবটি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ আজ শুক্রবার এ আদেশ দেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া তিন ব্যক্তি হলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ, তানভীর ভূঁইয়া ও সেলেষ্টি রহমান।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনকে আজ আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত প্রত্যেকের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সেলেষ্টি রহমান (ওড়না দিয়ে মাথা ঢাকা)। সিএমএম আদালতে নেওয়ার সময় ছবটি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আনোয়ারুল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হলেন আক্তারুজ্জামান শাহীন (পলাতক)। তাঁর সঙ্গে সংসদ সদস্যের দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। লেনদেনের কিছু বিষয় নিয়ে আনোয়ারুলের ওপর ক্ষোভ ছিল তাঁর, যা তিনি জানতেন না। অপর অসামি শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে আনোয়ারুলের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এ জন্য তাঁরা দেশের বাইরে নিয়ে আনোয়ারুলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন, যাতে কেউ না বুঝতে পারে। ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে কথা বলার বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ থেকে আনোয়ারুলকে ভারতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল ১২ মে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় গিয়ে তাঁর পূর্বপরিচিত বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পরদিন তিনি চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হন। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, আনোয়ারুল আজীম ভারতে খুন হয়েছেন। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যমতে বাংলাদেশিরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
তানভীর ভূঁইয়া। সিএমএম আদালতে নেওয়ার সময় ছবিটি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আনোয়ারুলকে অপহরণ করার অভিযোগে ওই দিন (বুধবার) শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস।
১৩ মে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে আনোয়ারুলকে হত্যার পর লাশ টুকরা করে ব্যাগে ভরে সরানো হয়। এর কিছু অংশ কলকাতার একটি খালে ফেলা হয়েছে। খুনিদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ স্থানীয় পুলিশের বিশ্লেষণ ও ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ডিবির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামিরা আনোয়ারুল হত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আনোয়ারুলকে হত্যা করার আগে লাশ গুমের পরিকল্পনা সাজান খুনিরা। এ জন্য তাঁরা ট্রলি ব্যাগ, চাপাতি, ব্লিচিং পাউডার, পলিথিনসহ অন্যান্য সামগ্রী কিনে রাখেন।
কলকাতার একটি সূত্র বলছে, নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজীমকে খুন করা হয়, সেখানকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, কয়েকজন ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছেন। তাঁদের তিনজন ঢাকায় ধরা পড়েছেন। কলকাতা পুলিশ মনে করছে, ওই ট্রলি ব্যাগের মাধ্যমে আনোয়ারুলের খণ্ডিত দেহ সরানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন–অর–রশীদ সাংবাদিকদের বলেছেন, আনোয়ারুলকে হত্যার পর লাশ খণ্ড খণ্ড করে গুম করা হয়। পুরো লাশ না পাওয়া গেলেও খণ্ডিত মরদেহ পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তিনি। ডিবিপ্রধান বলেন, খুনিরা অনেক দিন ধরে এই সংসদ সদস্যকে হত্যার সুযোগ খুঁজছিলেন। এক-দুই মাস ধরে গুলশান ও বসুন্ধরার দুটি বাসায় এ নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়।
আনোয়ারুলকে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সৈয়দ আমানুল্লাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বলে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে। তিনি একসময় চরমপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গণেশ নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে যশোরের অভয়নগর থানার এক মামলায় আমানুল্লাহ সাত বছর (১৯৯১-৯৭) জেল খাটেন। ইমান আলী নামের আরেক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জেল খাটেন তিনি।
চরমপন্থীদের সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র বলছে, আমানুল্লাহ নামে খুলনায় একজন সন্ত্রাসী আছেন, যিনি চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান শিমুল ভূঁইয়ার অন্যতম সহযোগী ছিলেন। কিন্তু সাজা খাটার যে বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে শিমুল ভূঁইয়াই নিজেকে আমানুল্লাহ পরিচয় দিচ্ছেন।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমানুল্লাহ পরিচয়দানকারী ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন, আনোয়ারুলকে খুন করার জন্য আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে তাঁদের ৫ কোটি টাকার চুক্তি হয়।