গাছে ঝুলছে লক্ষণভোগ আম। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিমর্ষি গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরিপক্ক হলেই কেবল আম পেড়ে বাজারে নামানো যাবে। থাকছে না আম সংগ্রহের নির্ধারিত তারিখ বা ক্যালেন্ডার। গত কয়েক বছরের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় এবারও জেলা প্রশাসন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণ’ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খানের সভাপতিত্বে এতে আমবিজ্ঞানী, আমচাষি, কৃষি কর্মকর্তা, রেলওয়ে কর্মকর্তাসহ পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বলা হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারগুলোতে অপরিপক্ব আম বা রাসায়নিকের সাহায্যে পাকানো আম বাজারজাত হয় না। এটাই এখানকার সংস্কৃতি। তাই এখানে গাছ থেকে আম পাড়ার সময় নির্ধারণের প্রয়োজন পড়ে না। গত বছরগুলোতে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সভায় উপস্থিত নেতৃস্থানীয় আমচাষিরা অপরিপক্ব আম বাজারজাত না করার প্রতিশ্রুতি দেন। জেলা প্রশাসনও বিষয়টি নজরদারিতে রাখবে বলেন সিদ্ধান্ত হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আহমেদ মাহবুব উল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পলাশ সরকার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আগামী ১০ জুন ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু করা হবে। এবার আমের গুণগত মান ঠিক রাখতে এসি বগি, না হলেও ট্রেনের বগিগুলোতে পানি স্প্রের মাধ্যমে কুলিং সিস্টেম চালু থাকবে বলে জানানো হয়।
আম পরিবহনে কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ভাড়া অতিরিক্ত ধরা হয় বলে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে। তবে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা শেষ হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে এখনো কোথাও আম ওঠেনি। আমচাষিদের ধারণা, মে মাসের শেষ দিকে গুটি আম ও জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত সুস্বাদু আম (জিআই পণ্য) ক্ষীরশাপাতি বাজারে আসতে শুরু করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান বলেন, এবার দেরিতে মুকুল এসেছে। তাই আমও দেরিতে পরিপক্ব হবে বা পাকবে। তবে তাপপ্রবাহের ওপরও আম পাকার ব্যাপারটি কিছুটা নির্ভর করবে।
আম পাড়ার বিষয়ে সময় নির্ধারণ না করায় চাষিরা খুশি বলে জানিয়েছেন কৃষি অ্যাসোসিয়েশন চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম। তবে আড়তদাররা ৫০-৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে আমচাষিদের বাধ্য করার বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্যসচিব আহসান হাবিব বলেন, ৫০-৫২ কেজিতে আম কিনে আড়তদাররা কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার আম আমচাষিদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন। এ ব্যাপারে তিনি জেলার তিন সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।