নির্বাচন | প্রতীকী ছবি

প্রতিনিধি নওগাঁ: নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনই আওয়ামী লীগের নেতা। আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির পদধারী ওই পাঁচ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফরিদ আহমেদ (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (কাপ পিরিচ), সহসভাপতি ঈশ্বর চন্দ্র বর্মণ (ঘোড়া), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান (হেলিকপ্টার) এবং জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক আবেদ হোসেন (আনারস)। এ ছাড়া সোহরাব হোসেন (জোড়া ফুল) নামের এক কলেজশিক্ষক প্রার্থী হয়েছেন। তবে তাঁর দলীয় পরিচয় নেই।

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ২১ মে নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলায় ভোট হবে। ২ মে প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন।

উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. মোত্তালিব হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনে কার পক্ষে অবস্থান নিতে হবে, দল থেকে এ ধরনের সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। দলের নেতা-কর্মীরা যিনি যাঁকে পছন্দ করেন, তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। নির্বাচন মানেই জয়-পরাজয়ের খেলা। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে নিজ দলেরই আরেক নেতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হচ্ছে অনেককে। এটা মোটেই সুখকর নয়।’

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন প্রার্থী থাকলেও ফরিদ আহমেদ, আবুল কালাম আজাদ ও জাহিদ হাসানের মধ্যে মূল লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই এই তিন প্রার্থীই সমান তালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আবেদ হোসেন ও ঈশ্বর চন্দ্র বর্মণের পক্ষেও আওয়ামী লীগের একটি অংশ কাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে পাঁচ নেতাকে ঘিরে উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় মাঠপর্যায়ে দলীয় কোন্দল আরও প্রকট হচ্ছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসনের সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি খালেকুজ্জামান। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি হয়। সেই বিভেদ এখনো রয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগেরই পাঁচ নেতা প্রার্থী হওয়ায় নেতা-কর্মীদের বিভক্তি আরও বেড়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছিল, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সেই বিভেদ আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নিয়ামতপুর শ্রীমন্তপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দলের পাঁচ নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের সবারই কমবেশি কর্মী-সমর্থক আছেন। এ অবস্থায় আমি নিজেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। এখন পর্যন্ত কারও পক্ষে প্রচারে মাঠে নামিনি। একই দলের একাধিক প্রার্থী থাকলে কোনো দলের পক্ষেই এটা সুখকর হতে পারে না। এতে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কোন্দল কমবে না, বরং আরও বাড়বে।’

আজহারুল ইসলামের মতো এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় মাঠে নামেননি উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব। তিনি বলেন, ‘যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, সবাই আমার নেতা। কাউকেই অশ্রদ্ধা করতে চাই না। দলীয় প্রতীক থাকলে দল যাঁকে মনোনয়ন দিত, তাঁর পক্ষেই কাজ করতাম। কিন্তু এখন যেহেতু দলীয় প্রতীক নেই এবং দলের একাধিক নেতা প্রার্থী হয়েছেন, এ পরিস্থিতিতে আমি দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছি। এখন পর্যন্ত কারও পক্ষে ভোট চাইনি।’