সুইমিংপুলের নামা সম্পর্কিত সাবধানতার বিষয়গুলো পুলে নামার আগেই জেনে নিন। মডেল: নাহিদা বকুল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
তাইয়্যেবা তাবাসসুম: চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। গরমে-ঘামে অস্বস্তিতে অনেকেরই মন চাইবে, একটু পানিতে ডুব দিতে পারলে ভালো লাগত। তাই এ সময়ে শহরাঞ্চলে সুইমিংপুলগুলোতে লোকজনের আনাগোনা বেশ বেড়েছে। যেহেতু অনেকেরই সেভাবে নিয়মিত সাঁতার কাটার জন্য সুইমিংপুলে যাওয়া হয় না, তাই সুইমিংপুল-সম্পর্কিত সাবধানতার বিষয়গুলো আগেই জেনে নেওয়া উচিত।
সুইমিংপুলের নির্দেশনা
সাধারণ সুইমিংপুলের কর্তব্যরত একজন স্টাফ থাকেন, যিনি সাঁতার কাটা বা পুল ব্যবহারের বিষয়ে সবাইকে প্রাথমিক ধারণা দিয়ে থাকেন। তবে তাঁর অনুপস্থিতিতে নোটিশ বোর্ডে টাঙানো বিভিন্ন বিধিনিষেধ দেখে নিতে পারেন, যেমন সুইমিংপুলের গভীরতা-বিষয়ক লেনের চিহ্ন, জরুরি মুহূর্তে করণীয়, সাঁতারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বা লাইফজ্যাকেট কোন জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হবে, মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখা, ময়লা না ফেলা ইত্যাদি।
সাঁতারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
সাঁতার কাটার জন্য একটু আঁটসাঁট পোশাক পরা ভালো। অনেকেই সুইমস্যুট ব্যবহার করেন, তবে সুইমিংপুলে ক্ষতিকারক ক্লোরিন থাকে, আর এ ক্লোরিন থেকে ত্বককে রক্ষার জন্য পুরো শরীর আবৃত থাকে, এমন পোশাক সাঁতারের জন্য বেছে নেওয়া ভালো। পোশাক ছাড়াও নতুন সাঁতারুদের জন্য ভালো মানের সুইমিং ক্যাপ আর চশমা ব্যবহার করা জরুরি।
বাজারে সাধারণত দুই ধরনের সুইমিং ক্যাপ পাওয়া যায়। একটি হলো ল্যাটেক্সের—একটু পাতলা ধরনের আর কম দামি। তবে যাঁদের ল্যাটেক্সে অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁরা চাইলে সিলিকন ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। এটি ভারী এবং দীর্ঘক্ষণ চুল আটকে রাখে। সুইমিং ক্যাপের আঠালো উপকরণের কারণে এটা পরা বা খুলে ফেলা কিছুটা ঝামেলা। তবে ক্যাপ শুকনা থাকা অবস্থায় কিছুটা বেবি পাউডার ক্যাপের ভেতরে মেখে নিলে পড়তে ও খুলতে সুবিধা হয়।
সুইমিংপুলে ভিড় এড়িয়ে চলুন । মডেল: নাহিদা বকুল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ভিড় বেশি হলে কী করবেন
ইদানীং যেহেতু তাপপ্রবাহ বেশি, তাই দুপুর কিংবা বিকেলে সুইমিংপুলে ভিড় একটু বেশিই থাকে। তাই আপনি যদি সাঁতার শিখতে চান, তবে সকালবেলাটা আপনার জন্য উপযুক্ত সময়। সাঁতারের বিভিন্ন পদ্ধতি, যেমন বাটারফ্লাই বা ব্যাকস্ট্রোক শেখার জন্য একটু বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। আর যদি যথাযথ উপকরণ, যেমন পাখনা বা ফিন আর প্যাডেল নিয়ে বেশি লোকজনের মধ্যে সাঁতার কাটেন, তবে আহত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
অন্যকে সম্মান করুন
হতে পারে আপনি খুব ভালো সাঁতারু বা সাঁতার জানেনই না। দুই শ্রেণির লোকদেরই উচিত সাঁতার কাটার সময় একে অপরকে সম্মান দেখানো৷ যদি আপনি প্রথম শ্রেণির লোক হন, তবে কখনোই অপরজনকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। আর যদি দ্বিতীয় শ্রেণির লোক হন, তবে একটু সময় নিন, সুইমিংপুলের অহেতুক প্রতিযোগিতায় জড়াবেন না। আস্তেধীরে সাবধানতার সঙ্গে শিখুন।
সুইমিংপুলের নিয়মিত সাঁতার কাটলে বেশির ভাগ মানুষ আরেকটা যে সমস্যার মুখোমুখি হন, তা হলো চর্মরোগ। কেননা, সুইমিংপুলের পানিতে জীবাণুনাশক হিসেবে অল্প পরিমাণে ক্লোরিন বা ব্রোমিন দেওয়া হয়। এই ক্লোরিন বা ব্রোমিন ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবাণু নাশ করলেও আমাদের ত্বকে থাকা তৈলাক্ত ‘সিবাম’-এর ক্ষয় করে। ‘সিবাম’ ত্বককে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচাতে ত্বকের ওপরের স্তরে থাকে। সিবামের ক্ষয় হওয়ায় সুইমিংপুলের পানিতে সহজেই চর্মজনিত রোগ, যেমন চুলকানি, র্যাশ, চুল পড়া, এমনকি একজিমাও হতে পারে।
ক্লোরিন বা ব্রোমিনের ক্ষতিকর প্রভাব এড়িয়ে চলুন (প্রতীকী ছবি) মডেল: নাহিদা বকুল | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ক্লোরিন বা ব্রোমিনের ক্ষতিকর প্রভাব যেভাবে এড়ানো যায়
সাঁতারের আগে ও পরে সাধারণ পানিতে গোসল: ক্লোরিনযুক্ত পানি যেন খুব সহজেই ক্ষতি করতে না পারে, তাই সুইমিংপুলে নামার আগেই সাধারণ পানিতে গা ভিজিয়ে নিতে হবে। কেননা, শুষ্ক ত্বকে ক্লোরিনের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আবার সাঁতার শেষেও সাধারণ পানি দিয়ে গা ধুয়ে নিলে র্যাশ বা চুলকানি হয় না।
সুইমিংপুলে নামার আগে শরীরে তেল বা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: ক্লোরিনযুক্ত পানিতে বেশিক্ষণ থাকলে ত্বক যেহেতু খুব শুষ্ক হয়ে যায়, তাই পুলে নামার আগে কোনো ময়েশ্চারাইজার বা অলিভ অয়েল, নারকেল তেল অথবা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেবি অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
সানস্ক্রিন ও ভিটামিন ‘সি’-র ব্যবহার: পুলের পানিতে সরাসরি সূর্যের রশ্মি প্রবেশ করতে পারে। আর ক্লোরিন বা ব্লিচ করা সুইমিংপুলের পানির সংস্পর্শে ত্বকের অবস্থা নাজেহাল হয়ে যায়। তাই এই গরমে পুলে নামার ১৫-২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।