শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষার দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশের আয়োজন করে ‘ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন’। ফার্মগেট, ১৮ মে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৩০ দিনের মধ্যে রাজধানীর ফার্মগেটের শহীদ আনোয়ারা উদ্যান ছাড়তে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডকে (ডিএমটিসিএল) সময়সীমা দেওয়া হয়েছে এক সমাবেশ থেকে। এর মধ্যে উদ্যান না ছাড়লে অবস্থান ও ঘেরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার বিকেলে শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষার দাবিতে সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। ‘ফার্মগেট শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলন’ এ সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে। ফার্মগেটের আনোয়ারা উদ্যানে অবকাঠামো নির্মাণ করেছে ডিএমটিসিএল।

উদ্যান ছাড়ার জন্য সময়সীমা ঘোষণা করেন শহীদ আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজীব। এ সময় তিনি মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ কোন আইনি ক্ষমতাবলে আনোয়ারা উদ্যানের জায়গা আটকে রেখেছে, তা জানতে চান।

সমাবেশে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) সভাপতি আকতার মাহমুদ বলেন, শহরে যেখানে সবুজের প্রয়োজন, সেখানে পার্ক ও খেলার মাঠগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে নানা রকমের উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয়, নানাভাবে দখল করা হয়।

আকতার মাহমুদ আরও বলেন, এই সবুজ পার্ক ও খেলার মাঠ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। এই শহরকে রক্ষা করতে চাইলে, বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হলে সব ধরনের পার্ক সংরক্ষণ করা দরকার। সামগ্রিকভাবে এ শহরের উন্নয়নের জন্য প্রকৃতিনির্ভর সমাধান দরকার।

শহীদ আনোয়ারা উদ্যানের জায়গায় রাখা হয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্পের সরঞ্জাম। ফার্মগেট, ১৮ মে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, এই শহরে হাজার হাজার বিপণিবিতান হয়েছে। এ জন্য প্রকৃতি, পরিবেশ, পার্ক ও মাঠ ধ্বংস করা হয়েছে। নিশ্বাস নেওয়ার মতো এমন পার্কের জায়গায় প্লাজা নির্মাণের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। গোপনে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্লাজা নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে দেওয়া হবে না।

সমাবেশে নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক বলেন, উদ্যানটির নামকরণ হয়েছিল ১৯৬৯–এর গণ-আন্দোলনে শহীদ আনোয়ারার নামে। এখানে শুধু ইতিহাস রক্ষা ও সম্মান জানানোর বিষয় নয়; ঢাকা শহর যেখানে অসহনীয় তাপের মধ্যে আছে, এমন সময় একটির পর একটি উদ্যান হারিয়ে গেলে, গাছ কাটা বন্ধ না হলে এ শহরে মানুষ বাস করতে পারবে না।

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্না বলেন, ‘দিনের পর দিন এই শহরে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমরা নগরবাসী এসব মেনে নিচ্ছি। আমরা সচেতন হলে এ ঢাকা শহর রক্ষা পাবে।’

সমাবেশে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন শিক্ষা ও সংস্কৃতি আন্দোলনের সদস্যসচিব রুস্তম আলী, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, নদীবিষয়ক সংগঠন ‘নোঙরের’ সভাপতি সুমন শামস, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) মামুন কবির প্রমুখ।

সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ‘নগরবাসীর নির্দেশ—উদ্যান দখল নিষেধ’, ‘আনোয়ারা উদ্যানে শপিং মল চাই না’, ‘আমাদের আনোয়ারা উদ্যান ফেরত চাই’, ‘উদ্যান নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করো’ এবং ‘সবুজ কেটে শপিং মল চলবে না’ লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন।

আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে ধানমন্ডি সাতমসজিদ সড়ক গাছ রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), সিআরবি রক্ষা আন্দোলন-চট্টগ্রাম, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রসহ (ক্যাপস) বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন।