শাকিনুর রহমান | ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি রাজশাহী: এক দিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ দুজনের মৃত্যুর পর এই সাপ নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ধান কাটতে গিয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর পর ধানকাটার শ্রমিকদের মধ্যে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগে এই সাপের কামড়ে একই এলাকার ছয়জন শ্রমিকের মৃত্যুর পর একটি বেসরকারি সংস্থা শ্রমিকদের জন্য গামবুট সরবরাহ করেছিল। এখনো তাঁরা গামবুট পরে ধান কাটতে মাঠে নামেন।
রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মারা যাওয়া শিক্ষার্থীর নাম শাকিনুর রহমান। তাঁর বাড়ি জেলার চারঘাট উপজেলার মোক্তারপুর গ্রামে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মৃত শাকিনুরের চাচাতো ভাই শিমুল জানান, গত শনিবার সন্ধ্যায় মোক্তারপুর বাজারের কাছে পদ্মা নদীর তীরে একটি বটগাছের নিচে বসে ছিলেন শাকিনুরসহ কয়েকজন। তাঁরা দোকান থেকে পেঁয়াজু কিনে খাচ্ছিলেন। খাওয়া শেষে ঠোঙা ছুড়ে ফেলে দেন। এ সময় হাত মোছার জন্য ঠোঙাটি তুলতে যান শাকিনুর। এ সময় সাপের শরীরে পা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে শাকিনুরকে কামড় দেয়। সাপটি মারার পর সবাই চিনতে পারেন, সাপটি রাসেলস ভাইপার।
শিমুল বলেন, ‘তখনই ভাইকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। ভাইয়ের মৃত্যুর পর থেকে এলাকায় রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আগে পদ্মার চরে এই সাপের কামড়ে মানুষ মরেছে। এবার এই সাপ লোকালয়ে ঢুকে গেছে।
এর আগে গত রোববার সকালে ধান কাটতে গিয়ে রাসেলস ভাইপারের কামড়ে সামায়ন কবির (২৫) নামের এক শ্রমিক মারা যান। তাঁর বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার অনুপনগর গ্রামে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার বলেন, রোববার সকাল ১০টার দিকে মাঠে ধান কাটতে গিয়েছিলেন সায়ন। রাসেলস ভাইপার কামড় দিলে তিনি চিৎকার দেন। দ্রুত তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই দিন রাত আটটার দিকে তিনি মারা যান। কৃষকেরা পরে সাপটি মেরে ফেলেন। ঘটনার পর থেকে শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গোদাগাড়ীর রাজাবাড়ি গ্রামের কৃষক আবদুর রউফ বলেন, আট বছর আগে গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের ছয়জন শ্রমিক রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মারা যান। ভয়ে তখন কেউ মাঠে নামছিলেন না। একটি বেসরকারি সংস্থা তখন ১০ জোড়া গামবুট দিয়েছিল। স্থানীয় প্রশাসন আরও ১০০ জোড়া দিয়েছিল। সেই বুট পরেই এখন শ্রমিকেরা ধান কাটতে যান। এখন উপজেলার অন্য এলাকায়ও রাসেলস ভাইপার ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে কৃষকদের মধ্যে জরুরিভিত্তিতে গামবুট সরবরাহ করা দরকার।