টানা দাবদাহের পর রাজশাহীতে স্বস্তির বৃষ্টি। বৃষ্টির পর সকালে খেত থেকে কাটা ধান তুলে নিচ্ছেন একদল শ্রমিক। বুধবার সকালে রাজশাহীর তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহীতে টানা এক মাসের বেশি সময় তাপপ্রবাহের পর স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত ৫১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় কিংবা শিলাবৃষ্টি ছিল না। এই বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। বৃষ্টির পর আজ বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রোদ উঠেছে।

বৃষ্টিতে ধুয়েমুছে গেছে গাছপালায় লেগে থাকা ধুলাবালু। এই বৃষ্টি আমসহ অন্যান্য ফসলের জন্য ভালো বলে কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানিয়েছেন।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ মার্চ রাতে রাজশাহীতে ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছিল। এর পর থেকে তাপমাত্রা বাড়তেই থাকে। রাজশাহীতে গত এপ্রিল মাসে ৩৬ থেকে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল টানা ২৮ দিন। এর মধ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ ছিল ১৩ দিন। গত ৩০ এপ্রিল ৫২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মে মাসের দিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি হলেও রাজশাহীতে বৃষ্টির দেখা মিলছিল না। তবে কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা কমে আসছিল। গত দুই দিন মোটামুটি ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। আজ বৃষ্টির পর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. রহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন তাপপ্রবাহের পর বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির সময় তেমন ঝোড়ো বাতাস ছিল না। তবে আপাতত আর বৃষ্টি হচ্ছে না।

এদিকে টানা তাপপ্রবাহে জনজীবন অস্বস্তির মধ্যে পড়েছিল। বৃষ্টির অভাবে টিউবওয়েলগুলোতে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। খেতখামার শুকিয়ে ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম-লিচুর, খরায় ঝরে গেছে।

পবা উপজেলার বাগসারা গ্রামের কৃষক সুলতান মাহমুদ বৃষ্টির পর খেতে নেমে গেছেন। আজ সকাল ৮টার দিকে তিনি আরেক শ্রমিক নিয়ে জমিতে বেগুনের চারা রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কী গরমটাই না গেল! ডিপটিউবওয়েলের পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছিল। জমি তৈরি করা থাকলেও পানির অভাবে কোনো কিছু রোপণ করা যায়নি।’ এই বৃষ্টিতে তাঁদের খুব ভালো হয়েছে।

তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া গ্রামে আলমগীর হোসেনসহ কয়েকজন ধানের জমিতে কাজ করছিলেন। গতকাল তাঁরা ধান কেটেছেন। আজ সেগুলো বেঁধে ওপরে তুলছিলেন। বৃষ্টির কারণে তাঁদের ধানগুলো জমি থেকে তুলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তারপরও বৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা খুশি। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিটা দরকার ছিল খুব।’

পুঠিয়ার আমচাষি রায়হান আলী বলেন, এবার আমের ফলন কম। খরায় আম যা ছিল, তা-ও ঝরে যাচ্ছিল। এ বৃষ্টি আম ঝরা কমাবে। আমের আকৃতিও বাড়াবে। এই সময়ে বৃষ্টি আমের জন্য আশীর্বাদ।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, সব ফসলের জন্যই এই বৃষ্টি ভালো। আম, লিচুর জন্য তো কথাই নেই। বৃষ্টির অভাবে অনেক শাকসবজি কৃষক ফলাতে পারেননি। এখন আর সমস্যা নেই। খেতে থাকা ধানের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। বৃষ্টির কারণে হয়তো এক-দুই দিন একটু ধান তুলতে সমস্যা হবে।