বাগাতিপাড়ায় এজেন্ট-ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা, সংঘর্ষে আহত ৪

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার মাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে আজ সকালে ১০টার দিকে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নাটোর: নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আজ সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা, এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া এবং দুই প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের দুটি ও পাঁকা ইউনিয়নের একটি কেন্দ্র ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

এসব ঘটনায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ফাগুয়াড়দিয়াড় থেকে দুজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান ওরফে হেবডা আলী (২২) এবং আবুল বাশার (২৪) নামের আরেকজন। মাড়িয়ায় সংঘর্ষে  তিনভাইসহ চারজন আহত হয়েছেন। তিন সহোদর হলেন শহিদুল ইসলাম, মিলন আলী ও পান্না আলী। তাঁরা তিনজন তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক। এর মধ্যে মিলন আলী আনারস প্রতীকের এজেন্ট।

আজ সকাল পৌনে নয়টায় ফাগুয়াড়দিয়াড় ইউনিয়নের শালকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা হয় বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত হওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, তখন পর্যন্ত চারটি কেন্দ্রে তাঁর এজেন্টদের ও ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

এ সময় ফাগুয়াড়দিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ঢুকতে না পারা দুজন ও উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের একজন এজেন্ট সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছালেক আলী বলেন, ‘আমি ফাগুয়াড়দিয়াড় প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে এজেন্ট হিসেবে গিয়েছিলাম। কিন্তু আনারস প্রতীকের প্রার্থী শরিফুল ইসলামের পাঁচ-সাতজন লোক আমাকে বাধা দেন।’

ওই কেন্দ্রের আরেক এজেন্ট কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি কেন্দ্রে ঢোকার চেষ্টা করলে সাবেক সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলামের লোকজন আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।’
এ ছাড়া সাহিদা বেগম নামের এক নারী এজেন্ট জানান, তিনি কেন্দ্রে ঢুকতে পারলেও থাকতে পারেননি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজনের চাপে তিনি বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে ফাগুয়াড়দিয়াড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, পুরুষ এজেন্টদের সকাল সোয়া নয়টার সময় বিভিন্ন ভোটকক্ষে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে নারী এজেন্ট চলে যাওয়ায় তিনি দায়িত্ব ফিরে পাননি।

মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচারণার সময় আমাকে ও আমার কয়েকজন কর্মীকে আনারস প্রতীকের কর্মীরা মারধর করেছেন এবং ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছেন। আজ তাঁরা ভোটের দিন আমার এজেন্ট ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছেন না।’

তবে আনারস প্রতীকের প্রার্থী শরিফুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাঁর কোনো সমর্থক কাউকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেননি। তবু তাঁর দুই সমর্থককে পুলিশ আটক করেছে। এতে তাঁর সমর্থকেরা ভীত হয়ে পড়ছেন।

বাগাতিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নান্নু খান জানান, মাড়িয়া ভোটকেন্দ্রে কোনো ঝামেলা হয়নি। কেন্দ্রের বাইরে তিন ভাইয়ের মধ্যে ভোট দেওয়া নিয়ে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) মাছুদুর রহমান জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। বাইরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেসব ঘটনা প্রতিহত করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে।