বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সদর দপ্তর | ছবি: সংগৃহীত |
প্রতিনিধি রাজশাহী: কাজের জন্য দেনদরবার করতে গিয়ে রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক প্রকল্প পরিচালকের শার্টের কলার ধরে বসেন এক ঠিকাদার। তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পের শেষ বছরে এসে নতুন নিয়ম করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ ভাগ করে দেওয়ায় ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ওই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর সেই প্রকল্পের দরপত্র বাতিল করা হয়েছে।
বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ আজ রোববার দরপত্র বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বাতিলের নির্দিষ্ট তারিখ বলতে পারেননি। তিনি বলেন, দরপত্র প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকায় ওটা বাতিল করা হয়েছে। নতুন করে আবার দরপত্র আহ্বান করা হবে।
গত ২৮ এপ্রিল রাজশাহীতে বরেন্দ্র ভবনে বিএমডিএর ‘ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সুমন্ত কুমার বসাকের শার্টের কলার চেপে ধরেন একজন ঠিকাদার। ঠিকাদারদের অভিযোগ, ১১ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের ৫০টি প্যাকেজের কাজ ৮-১০টি করে নিজের এলাকার (নওগাঁর) পছন্দের ঠিকাদারদের মধ্যে ভাগ করে দেন সুমন্ত কুমার বসাক। এ নিয়ে কথা বলার সময় ওই ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ভুক্তভোগী পিডি ঘটনার পর কর্তৃপক্ষকে কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় ওই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারছে না বিএমডিএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে বিএমডিএর ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের পরিচালক সুমন্ত কুমার বসাক বিএমডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। ঠিকাদারদের অভিযোগ, তিন বছর ধরে প্রকল্পের দরপত্রের শর্ত ছিল, একজন ঠিকাদার একটি প্যাকেজের কাজ পাবেন। সে অনুযায়ী ৫০টি কাজের দরপত্র আহ্বান করলে ৫০ জন ঠিকাদার কাজ পেয়েছেন। দ্রুততার সঙ্গে কাজও শেষ হয়েছে। এবার প্রকল্প পরিচালক আগের শর্ত তুলে দিয়ে পছন্দের কয়েকজন ঠিকাদারের মধ্যে ৫০টি কাজ ভাগ করে দেন।
সূত্র জানায়, প্রতিটি প্যাকেজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ২২ লাখ ২০ হাজার ৬৯২ টাকা করে। এতে সর্বোচ্চ ১০টি প্যাকেজের কাজ পায় নওগাঁর ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সাপ্লায়ার। এ ছাড়া নওগাঁর মমতা ফার্মেসি আটটি, নাটোরের আমিনুল এন্টারপ্রাইজ সাতটি, নওগাঁর এমডি আবদুল মজিদ পাঁচটি, নওগাঁর পূর্ণিমা এন্টারপ্রাইজ চারটি ও বাকি কয়েকজন ঠিকাদার এক, দুই বা তিনটি করে কাজ পেয়েছেন। কাজ ভাগাভাগির পর কয়েক দিন কার্যালয়ে আসেননি পিডি। এর মধ্যে কাজ না পাওয়া রাজশাহীর ঠিকাদারেরা বরেন্দ্র ভবনে ঘুরতে থাকেন। ২৮ এপ্রিল তিনি কার্যালয়ে এলে ঠিকাদারেরাও সেখানে যান। তাঁদের নিয়ে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শামসুল হোদার কক্ষে বসেন পিডি। সেখানে সুমন্ত কুমার বসাকের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন ঠিকাদার সাকির হোসেন। একপর্যায়ে পাশে বসা আরেক ঠিকাদার সুমন্ত কুমার বসাকের শার্টের কলার চেপে ধরেন। এ নিয়ে তুমুল হট্টগোল হয়।
ঘটনার পর ওই প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঠিকাদারেরা। বিএমডিএর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দরপত্র বাতিলের পর ক্ষুব্ধ ঠিকাদারদের মধ্যে আবার একটি করে কাজ দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যদিও এ ব্যাপারে কেউ মন্তব্য করেননি।
জানতে চাইলে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, কাজ কাউকে দেওয়া যায় না। কাজ পেতে হয়। কাজ দেওয়ার কোনো সমঝোতা ঠিকাদারদের সঙ্গে হয়নি। পিডির শার্টের কলার ধরার ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘যার কলার ধরার কথা শোনা যাচ্ছে, তিনিই তো বলছেন না। তাহলে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে?’