শেয়ারবাজার | গ্রাফিকস পদ্মা ট্রিবিউন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন আবারও হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আজ সোমবার দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। গত প্রায় তিন মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে সর্বশেষ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাজারে ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক বাড়লেও লেনদেন আগের দিনের চেয়ে কমে গেছে। সিএসইর সার্বিক সূচকটি এদিন ১৩০ পয়েন্ট বেড়েছে। দিন শেষে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২৫ কোটি টাকা কম।
বাজার–সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক দিন বাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকায় নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা আবারও সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। এ কারণে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে। তাতে লেনদেনের সঙ্গে শেয়ারের দামও বাড়তে শুরু করেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বাজারে দরপতন শুরু হয়েছিল। এতে অনেক বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে যান। আবার অনেকে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে চুপচাপ বসে ছিলেন। কয়েক দিন ধরে শেয়ারের দাম বাড়তে শুরু করায় এসব বিনিয়োগকারীর কেউ কেউ আবার বাজারে ফিরতে শুরু করেছেন। যাঁরা শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকে আবার বিনিয়োগ শুরু করেছেন। এ ছাড়া কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো কিছু কোম্পানির শেয়ারেও বিনিয়োগ বেড়েছে। সব মিলিয়ে বাজার তাই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী জানান, আজ বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনার জন্য অর্থ জমা দিয়েছেন তাঁদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের বিপরীতে। কয়েক মাস আগে এসব বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিয়েছিলেন। এখন দাম বাড়তে শুরু করায় তাঁরা কিছু টাকা ফেরত আনতে শুরু করেছেন বাজারে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত চার কার্যদিবসে ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫৭ পয়েন্ট বেড়ে আবারও ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। আজ এ সূচক ৩৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭২৭ পয়েন্টে। এর আগে সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্টের ওপরে ছিল।
ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল ওষুধ খাত। এ খাতের লেনদেন হওয়া ৩৩ কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২২৬ কোটি টাকা। লেনদেনে ওষুধ খাতের শীর্ষে থাকার অন্যতম কারণ হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে ওরিয়ন ইউফিউশন, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সালভো কেমিক্যাল, ওরিয়ন ফার্মা, কোহিনূর কেমিক্যালস, নাভানা ফার্মা প্রভৃতি। এসব কোম্পানি আজ ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল। এ খাতের সর্বমোট ২২৬ কোটি টাকার লেনদেনের মধ্যে ১৬১ কোটি টাকা ছিল উল্লিখিত ছয় কোম্পানির। অর্থাৎ ওষুধ খাতের মোট লেনদেনের প্রায় তিন–চতুর্থাংশই ছিল ছয় কোম্পানির দখলে। ওষুধ খাতের পর লেনদেনের শীর্ষে ছিল বস্ত্র খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৩৫ কোটি টাকা।
সার্বিক বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মুসা বলেন, বাজার যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে, তখন নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরাও সক্রিয় হতে শুরু করেন। তাতে লেনদেন বাড়ে। গত প্রায় দুই মাসের টানা পতনে বাজার অনেক নিচে নেমে গিয়েছিল। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে পুনর্নিয়োগ হয়েছে। ফলে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিক থেকে চেষ্টা থাকবে বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফিরিয়ে আনার।
মোহাম্মদ মুসা আরও বলেন, বাজারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকে ধরে রাখা। যদি কয়েক দিনের উত্থানের পর সবাই মুনাফা তুলে নিতে শুরু করেন, তবে আবারও দরপতনের শঙ্কা রয়েছে। তাই দীর্ঘমেয়াদে বাজার কতটা টেকসই হবে তা এখনই নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।