হাটে আজ থেকে উঠেছে গোপালভোগ আম। দুপুরে রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী জেলার ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী আজ শনিবার থেকে গোপালভোগ ও রানিপসন্দ আম নামানোর কথা। রানিপসন্দ আম না পাড়া হলেও গোপালভোগ আম বাজারে এসেছে। রাজশাহী জেলার আমের হাটখ্যাত বানেশ্বর হাটে আজ ভোর থেকে গোপালভোগ আম আসতে শুরু করেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম একটু বেশিই।

১২ মে রাজশাহী জেলার আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেদিন জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত সভায় কৃষি কর্মকর্তা, আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আম পরিবহনে নিয়োজিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করা হয়।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উম্মে ছালমা বলেন, এবার মুকুল কম আসায় আম কিছুটা কম এসেছে। যদিও এবার বড় কোনো ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হয়নি, এটা একটা ভালো দিক।

‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামিয়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আজ ২৫ মে গোপালভোগ আম এল বাজারে। একই দিন রানিপসন্দ আম আসার কথা থাকলেও আমটি পরিপক্ব হয়নি। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, এরপর লক্ষ্মণভোগ বা লখনা ৩০ মে এবং একই তারিখে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি গাছ থেকে নামানো যাবে। এ ছাড়া ১০ জুন থেকে ল্যাংড়া ও ব্যানানা আম; ১৫ জুন আম্রপালি এবং একই তারিখে ফজলি; ৫ জুলাই বারি-৪ আম; ১০ জুলাই আশ্বিনা; ১৫ জুলাই গৌড়মতি এবং ২০ আগস্ট থেকে ইলামতি আম নামানো যাবে। তবে এই তারিখের আগেও চাষিরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়ে আম পরিপক্ব হওয়া শর্তে গাছ থেকে নামাতে পারবেন। এর বাইরে বারোমাসি কাটিমন ও বারি-১১ আম সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে।

কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারীরা গোপালভোগ আম কিনছেন ২৪০০ থেকে ২৮০০ টাকা মণ দরে। আজ পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়নের আমের হাটটি ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক ঘেঁষে উত্তর পাশে বসে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে সাপ্তাহিক হাট বসে। তবে আমের মৌসুমে প্রতিদিনই আমের হাট বসে এখানে। এবার ১৫ মে এ হাটের আমের মৌসুম শুরু হয়েছে। আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিন বানেশ্বর হাটে আম বেচাকেনা হবে। বানেশ্বর হাট এলাকায় সব কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয় আছে। এর ফলে এখানে আম কিনে সহজেই পাঠানো যায় দেশের যেকোনো প্রান্তে।

আজ দুপুরের পর গিয়ে দেখা যায়, ভ্যান ও ট্রলির ওপর আম সাজিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে বাজারে মাচা পেতে আম নিয়ে বসেছেন। এসব জায়গায় আমের স্তূপ। সেখানে অপেক্ষাকৃত পাকা ও রংধরা আমগুলো ওপরে রাখা হয়েছে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের আম কেটেও দেখাচ্ছেন। অনেকে আম খেয়ে পছন্দ হলে কিনছেন।

বাজারে গোপালভোগ আম নিয়ে এসেছিলেন চারঘাট উপজেলার শলুয়া এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। তিনি প্রতিবছর আমের বাগান ধরে কেনেন। পরে সেখান থেকে আম পেড়ে বিক্রি করেন বানেশ্বর হাটে। নজরুল ইসলাম আজকে প্রথম দিন ৩০ মণ গোপালভোগ আম পেড়েছেন। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের শতবর্ষী একটি আমগাছ থেকেই আজ আম পেড়েছেন ৩০ মণ। তবে তাঁর আমের আকৃতি একটু ছোট। এই আম ব্যবসায়ী বলেন, এবার আবহাওয়ার কারণে আমের আকৃতি ছোট, আমও কম। তবে আজ একটি গাছ থেকেই ৩০ মণ আম পাড়া হয়েছে। প্রতি মণ ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে দুপুর ১২টার দিকে আমের দাম মণপ্রতি আরও ১০০-২০০ টাকা বেশি ছিল বলে তিনি জানান।

হাটের জায়গা ছাড়িয়ে রাজশাহী–ঢাকা মহাসড়কের ওপরও বসেছে আমের হাট। আজ দুপুরে রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

তবে গত বছর ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গোপালভোগ আম বাজারে আসার প্রথম দিন প্রতি মণের দাম ছিল ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা। এবার আমের দাম নিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, এবার তো গুটি আমই তাঁরা দুই হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। এই আমগুলো সাধারণত দেড় হাজার টাকা মণে বিক্রি হয়। গুটি আম সর্বশেষ তিনি সর্বনিম্ন ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। এবার আমের দাম বেশিই যাবে। কারণ হলো গাছে আম কম।

পবা উপজেলার মড়মড়িয়া থেকে বিকেলে আম নিয়ে বাজারে এসেছিলেন মো. মিজান নামের এক ব্যবসায়ী। তিনিও বাগান ধরে আম কিনেছেন। তিনি বলেন, অনলাইনে যাঁরা আমের ব্যবসা করেন, তাঁরাই তাঁদের ক্রেতা। এ ছাড়া অন্যান্য পাইকাররাও আসেন আম কিনতে। প্রথম দিন বলে আজ আমও কম, ক্রেতাও কম। এক-দুই দিন পর দেখা যাবে, বাজারে আম রাখার জায়গা থাকবে না। ক্রেতাও অনেক থাকবে।

চারঘাটের কামাল হোসেন দুই মণ আম এনেছিলেন। তিনি ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ দাম চাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, সকালের দিকে আম নিয়ে আসতে পারলে ভালো হতো। তখন ২ হাজার ৮০০ টাকা মণ ছিল। তিনি তো বাগানেই ২৩ কেজি আম বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৩৭৫ টাকায়।

অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশে আম বিক্রি করেন দুই বন্ধু ফজলে রাব্বি ও মো. জুয়েল রানা। ফজলে রাব্বির বাড়ি ঢাকায়, জুয়েলের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। তবে চাকরিসূত্রে রাজশাহী থাকেন জুয়েল। তাঁদের সঙ্গে দেখা হলো বানেশ্বর হাটে। তাঁরা গাছ থেকে আম কিনেছেন ২ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। ফজলে রাব্বি বলেন, তিনি আজ এলেন, আর হয়তো আসবেন না। শুধু অর্ডার নেবেন, আর জুয়েল আম পাঠিয়ে দেবেন। তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর আম অনলাইনের মাধ্যমে এখন একেবারে মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যায়। আমের বাজার আগের চেয়ে অনেক বিস্তৃত হয়েছে। এটা আমচাষি ও ক্রেতা—উভয়ের জন্যই ভালো।

ফজলে রাব্বি ও জুয়েল রানার আম মোড়কজাত করছিলেন মো. মনির হোসেন নামের স্থানীয় এক তরুণ। প্রতিবছরই তিনি এ কাজ করে থাকেন। মনির বলেন, এবার আজ প্রথম দিন আম মোড়কজাত করার কাজ শুরু হলো তাঁর। আমের বাজার জমে উঠলে হয়তো কথা বলার ফুরসতও পাবেন না।