শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতির কক্ষটি তালাবদ্ধ রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে কক্ষ দখল ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন একটি আবাসিক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুক পোস্টে তিনি এই অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারী ছাত্রলীগ নেতার নাম তাজবীউল হাসান (অপূর্ব)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

তাজবীউল হাসান যে দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনহাজ ও শাহ্ মখদুম হল ছাত্রলীগের সহসম্পাদক মিঠু মহন্ত। তাঁরা দুজন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের (বাবু) অনুসারী।

তাজবীউল হাসান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি খাঁটি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমি দীর্ঘদিন ধরে হল ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। শেষ তিন-চার মাস কিছু কিছু কারণে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত আছি। দীর্ঘ সময় রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়নি নোংরা রাজনীতির কারণে। আমার মাস্টার্সের পরীক্ষা চলছে; দুইটা (বিষয়) পরীক্ষা হয়েছে, আরও তিনটা পরীক্ষা এখনো বাকি। . . .পরীক্ষা শেষ হলে এমনিতেই চলে যেতাম। পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই আমার রুম দখল; আমাকে হত্যার হুমকি। আমি রাজশাহী পরীক্ষা দিতে এলে আমার লাশও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিষয়টা দুঃখজনক।’

নতুন ছাত্রলীগ নেতাদের এমন আচরণ আশা করেননি উল্লেখ করে তাজবীউল হাসান আরও লিখেছেন, ‘শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত তুলে ধরে ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করব।’

ওই ফেসবুক পোস্ট দেওয়ার পর গতকাল রাতে তাজবীউল হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘একটা কাজে ঢাকায় এসেছি। মিনহাজ ও মিঠু আজকেই (গতকাল) আমার রুমমেটকে হল ছাড়তে হুমকি দেয়। এটা জানার পর মিনহাজকে কল করে বলি “আমি তো এখনো হলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছি। তা ছাড়া আমার মাস্টার্সও শেষ হয়নি। কিন্তু মিনহাজ বলেন, হলের সভাপতি হইছিস তো কী হয়েছে, তোরে যেন আর হলে না দেখি। এই কথা বলেই তিনি গালাগালি দেন।”’

তাজবীউল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানকে জানাই। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “তুই হলের সভাপতি হইছিস তো কী হয়েছে? তুই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ না। মিনহাজ কিছুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি হবে। একপর্যায়ে বিষয়টি দেখছেন বলে তিনি আশ্বাস দেন। পরে মিনহাজুলকে ফোন দিই।” তখন মিনহাজুল বলে, এখন সব হলের দায়িত্বে আমি আছি। আমি যা বলব, তাই হবে, তুই নেমে যাবি। তুই পরীক্ষা দিতে আয়, তোর পা ভেঙে ফেলব। তোর লাশ খুঁজে পাওয়া যাবে না।’

এ বিষয়ে মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কাল (গতকাল) সারা দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ছিলাম। শাহ মখদুল হলে যাইনি। তাহলে কীভাবে কক্ষ দখল করলাম? মূলত আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছি।’ হুমকি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে কোনো হুমকি দিইনি।’

তবে ছাত্রলীগের নেতা মিঠু মহন্ত বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল, অপূর্ব (তাজবীউল) একটি ছেলেকে টাকা দিয়ে তাঁর কক্ষে আসন দিয়েছে। বিষয়টি ছাত্রলীগ সভাপতি ও হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের জানাননি। এ জন্য ওই ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হলে গিয়েছিলাম। পরে ওই ছেলে হল ছেড়ে চলে গেছে। আমরা তাঁর কক্ষ দখল করিনি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাত্রলীগের একজন নাকি অপূর্বকে (তাজবীউল) থ্রেট করেছে। এখানে মিনহাজ জড়িত নন। মিনহাজের সঙ্গে অপূর্বর কথা হলে শিষ্টাচার মেনে কথা বলা উচিত ছিল; যেহেতু মিনহাজ বয়সে বড়। আমি একটু বাইরে আছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দেব।’