উপজেলা পরিষদ নির্বাচন |
নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষত নিয়েই আজ বুধবার ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশের ৮৭টি উপজেলায় বিরতিহীনভাবে চলবে ভোটগ্রহণ। ১০৯টি উপজেলায় ভোটগ্রহণের কথা থাকলেও রিমালের কারণে ২২টির ভোট স্থগিত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের বড় প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের পর অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি আরও বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর যদিও ভোটার উপস্থিতির চেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তৃতীয় ধাপে ১১২টি উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এর আগে আরও দুটি উপজেলা নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ফলে এ ধাপে মোট ৮৭টি উপজেলায় ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। সে লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসি।
ইসির তথ্যমতে, তৃতীয় ধাপের ভোটে ৮৭টি উপজেলায় একজন চেয়ারম্যান, চার জন ভাইস চেয়ারম্যান ও সাত জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩৯৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৫৬ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৯৯ জন মিলিয়ে মোট এক হাজার ১৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৫৬টি পৌরসভা ও ৮৪১টি ইউনিয়নের ২ কোটি ৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৮৪ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৭ হাজার ৪৫০টি। এর মধ্যে দুর্গম এলাকার ৪১৪টি কেন্দ্রে মঙ্গলবার (২৭ মে) রাতেই ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। বাকি ৭ হাজার ৩৬টি কেন্দ্রে আজ বুধবার ভোরেই এসব সরঞ্জাম পাঠানো হচ্ছে। নির্বাচনে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট বিজিবি মোতায়েন থাকবে ২৯৯ প্লাটুন। ভোটকেন্দ্রে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ২৯ হাজার ৯৫৮ জন, মোবাইল টিমে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৭ হাজার ৭৯৪ জন, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৩ হাজার ৩৬৪ জন। সর্বমোট পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে ৫৯ হাজার ২১৯ জন। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট র্যাবের ২৩০টি টিম মোতায়েন থাকবে। ভোটকেন্দ্র এবং মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোট আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৬৬৯ জন। নির্বাচনে স্বাভাবিক এলাকার প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি, গ্রাম পুলিশ, চৌকিদার, দফাদারসহ মোট ১৭ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আর গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮-১৯ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। বিশেষ এলাকার (পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা) সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২০-২১ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
তফসিল ঘোষণার পরদিন থেকে ভোটগ্রহণের তিন দিন পূর্ব পর্যন্ত আচরণবিধি প্রতিপালন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি উপজেলার জন্য একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট এবং ভোটগ্রহণের তিন দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরের দিন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরোধে প্রতি ৩টি ইউনিয়নের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৩০টি উপজেলায় অতিরিক্ত ২৯ প্লাটুন বিজিবি, ১৮টিম র্যাব, ১৯২ জন আনসার ও ৬৩ জন অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ, ইঞ্জিনচালিত বোট (নির্দিষ্ট রুটে চলাচলকারী ব্যতীত) ও অন্যান্য যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকায় ভোটগ্রহণের দুদিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আগামী ৫ জুন চতুর্থ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে নির্বাচন উপযোগী ৪৮৫ উপজেলায় চার ধাপে ভোট হচ্ছে এবার। প্রথম ধাপের ১৩৯ উপজেলায় ভোট হয়েছে গত ৮ মে। এসব উপজেলায় গড়ে প্রায় ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। প্রথম ধাপে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬টি উপজেলা নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ২২ জন। ২১ মে এই ধাপের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৩৮ শতাংশ। প্রথম ধাপের রেকর্ড সংখ্যক কম ভোটের পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। এর পেছনে কৃষকদের ধান কাটা ও বৃষ্টিসহ পাঁচটি কারণকে দায়ী করে পরের ধাপে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে আশাবাদী ছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু পরের ধাপেও কাঙ্ক্ষিত ভোটার উপস্থিতি না হওয়ায় সরকারবিরোধী বিএনপির বর্জনকেই মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
ইসি সূত্র জানায়, রিমালের প্রভাবে সারা দেশেই কমবেশি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের বড় এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক এলাকা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিশেষ করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে। এ অবস্থায় নির্বাচন আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতিতে খানিকটা বিঘ্ন ঘটছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে ২২টি উপজেলার নির্বাচন স্থগিত করেছে কমিশন। এরপরও ৮৭টি উপজেলায় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রিমালে এসব এলাকাতেও কমবেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে মানুষ। অনেক এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ ও মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর এই ধাপে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করে ভোটের হার বাড়ানো আরও বড় চ্যালেঞ্জ হয়েছে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।