কেক কেটে বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়েছে।  মঙ্গলবার বিকেলে ভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: গৌরবময় আড়াইশ বছরেরও বেশি সময় অতিক্রম করে ২৫৩ বছর পদার্পণ করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। সুদীর্ঘ এই স্বার্ণালি সময় পেরিয়ে এরই মধ্যে রাজশাহীর সব শ্রেণির মানুষের কাছে আস্থা ও ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে উঠেছে সরকারের অন্যতম এই প্রতিষ্ঠান।

১৭৭২ সালের ১৪ মে যাত্রা শুরু করেছিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে জেলা প্রশাসনের পরিসরও। ১৭৭২ সালে রোপিত বীজটি বতর্মানে ২৫৩ বছরে পদার্পণ করেছে। সেই উপলক্ষে রাজশাহী বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গলবার বিকেলে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে কেক কেটে বর্ষপূর্তি উদযাপন করা হয়েছে।  

বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে জেলার ১২৫তম জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।

অনাড়ম্বর এই উদযাপন অনুষ্ঠানে রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার আক্তার জামীল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কল্যাণ চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী কমিশনার (হিসাব ও নেজারত শাখা) আরাফাত আমান আজিজ, বিভাগীয় কমিশনারের একান্ত সচিব আশিক জামানসহ বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর বলেন, দেশের সামগ্রিক প্রশাসন ব্যবস্থাপনায় মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আর মাঠ প্রশাসনের কর্ণধার হচ্ছে জেলা প্রশাসন। মাঠপর্যায়ে সরকারের প্রতিভূ হিসেবে সুদীর্ঘ ২৫২ বছর থেকেই রাজশাহী জেলা প্রশাসন জনমানুষের আশ্রয়স্থল, সেবার উৎস, সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা ও ন্যায্য আচরণের প্রতীক এবং শিক্ষাসংস্কৃতি থেকে শুরু করে আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা ও নবতর রুচি নির্মাণের শ্রেষ্ঠতম আধার হিসেবে কাজ করে চলেছে।

বিভাগীয় কমিশনার আরও বলেন, জেলার সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্ব ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের হাতে অর্পিত রয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি। তাই জেলা প্রশাসন জেলার সার্বিক কর্মকাণ্ড সমন্বয়ের গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে রাজশাহী জেলা প্রশাসন ভূমি ব্যবস্থাপনা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বহুমাত্রিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনজীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা, অধিকার ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষাসহ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় প্রতিষ্ঠানটি অনবদ্য ঐতিহ্য লালন করে আসছে বলে উল্লেখ করেন।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ঐতিহ্যগতভাবেই জেলা প্রশাসন মাঠপর্যায়ে সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন, পর্যবেক্ষণ, সমন্বয় ও তদারকিকরণ এবং অগ্রগতি সম্পর্কে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রেরণ করে থাকে। ২৫৩ বছরে পদার্পণ করায় আমি রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

রাজশাহী জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে মিস্টার সি. ডাব্লিউ বাউটন রাউস গত ১৭৭২ সালে যোগদান করেছিলেন। সুদীর্ঘ আড়াইশ বছর পরে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ রাজশাহী জেলার ১২৫তম জেলা প্রশাসক হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে তিনি যোগদানের পর থেকে এই জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চিহ্নগুলোকে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ, সরকারি স্বার্থ সংরক্ষণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সরকারি জমি হতে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আদায়, মোবাইল কোর্ট ও টাস্কফোর্স পরিচালনা, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন, মুজিব বর্ষ উদযাপন, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত তথ্য-প্রযুক্তির বিস্তার ঘটানো, স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত কার্যক্রম মনিটরিং এবং জেলায় সুষ্ঠু সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে সততা, নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং একাগ্রতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, আজকের এই দিনে অর্থাৎ ১৪ মে ১৭৭২ সালে বৃটিশ শাসিত ভারতে ওয়ারেন হেস্টিংস (১৭৩২-১৮১৮) কর্তৃক প্রথম জেলা কালেক্টরের পদ সৃষ্টি করা হয়। ব্রিটিশ আমলে প্রথম সৃষ্ট পদটির নাম ছিল ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর। এজন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে আজও কালেক্টরেট হিসেবে অভিহিত করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে তাই এই উপমহাদেশের তথা বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো পদ এই ‘ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর’ আজ ২৫২ বছর অতিক্রম করে ২৫৩ বছরে পা রাখলো।

বাংলাদেশের বর্তমান এবং ভূতপূর্ব সব সম্মানিত ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান তিনি।