নওগাঁ: নিরুত্তাপ ভোটে আওয়ামী লীগ ছাড়া তেমন কারও আগ্রহ নেই

ভোটের মালামাল কেন্দ্রে পাঠানোর আগের প্রস্তুতি। মঙ্গলবার সকালে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিনিধি নওগাঁ: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে নওগাঁর বদলগাছী, পত্নীতলা ও ধামইরহাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আজ বুধবার। তিন উপজেলাতেই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী আছেন। এরপরও ভোট নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উত্তাপ-উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে না। নিরুত্তাপ ভোটে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মী ছাড়া কারও তেমন কোনো আগ্রহ নেই।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করেছে নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপি ও সঙ্গী দলগুলো। ফলে সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে লড়াই হতে যাচ্ছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচনে না আসায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে না।

নওগাঁর বদলগাছী, পত্নীতলা ও ধামইরহাটে চেয়ারম্যান পদে মোট প্রার্থী আছেন ১৩ জন। এর মধ্যে ১১ জনই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতা। এ ছাড়া তিন উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রার্থী হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সবাই আওয়ামী লীগের নেতা।

বিগত উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। ভোটের আগে সাধারণ ভোটার ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করত। এবার ভোটে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা প্রার্থী না হওয়ায় ভোটারদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ কম। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে গণসংযোগ করেছেন। মাইকে চলেছে প্রচারণা। নির্বাচনী এলাকায় শোভা পাচ্ছে ব্যানার-পোস্টার। তবে এসব তৎপরতাও ভোটারদের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে মনে করছেন স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা।

বদলগাছীর বিলাশবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, ‘এখন আর নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ পাই না। যা হচ্ছে খালি দেখে যাই। আমি আমার এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী ছাড়া এলাকার কারও মধ্যে ভোট নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এবারের নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছে, সবাই আওয়ামী লীগের। যে-ই জিতুক, আওয়ামী লীগেরই একজন জিতবে। ভোট দেওয়ার আগ্রহই হারিয়ে গেছে।’

পত্নীতলার নজিপুর পৌরসভার জিরো পয়েন্ট এলাকায় চায়ের দোকানে বসে আলাপ করছিলেন ছয়-সাতজন। তাঁদের মধ্যে জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আগের সেই ভোট আর নাই। আগে ভোটের এক-দুই মাস আগোত থেকে খালি ভোট লিয়েই আলোচনা হতো। অ্যাখন তো এমপি নির্বাচন লিয়েই মানুষের আগ্রহ নাই। উপজেলা নির্বাচন লিয়ে কী আগ্রহ থাকবে। যে দুজন প্রার্থী হছে, তারা দুজনাই আওয়ামী লীগ। বিএনপির প্রার্থী না থাকায় অনেক লোক ভোটই দিতে যাবে না।’

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ফেমার কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও নওগাঁ জজ কোর্টের আইনজীবী ডি এম আবদুল বারী বলেন, একসময় উৎসবমুখর পরিবেশে উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতো। নির্বাচন ঘিরে এক দশক আগেও গ্রামে-গঞ্জে মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। এখন একপ্রকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন হচ্ছে। মানুষের ভোট দেওয়ার আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মালেকও নির্বাচনের আমেজ কমেছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা নির্বাচনে এলে ভালো হতো। তবে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক ছাড়াও উন্নয়নের পক্ষে থাকা সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে আসবেন বলে আমি আশা করি।’

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বদলগাছীতে চেয়ারম্যান পদে আটজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৬ হাজার ১ জন। মোট ৬৪টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। পত্নীতলায় চেয়ারম্যান পদে দুজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানকার মোট ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ৯২০ জন। মোট ৭৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে।

ধামইরহাটে চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৪৬ জন। ধামইরহাটে ৫৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।