বগুড়া জেলার শেরপুর সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি শেরপুর: বগুড়ার শেরপুরে মূল কাগজপত্র ছাড়াই বিক্রয় দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে ব্যাংকে বন্ধক রাখা জমির। ক্রেতার নামে নামজারিও সম্পন্ন হয়েছে। তবে, বিক্রেতার দাবি তিনি জমি বিক্রি করেননি। ক্রেতা, দলিল লেখক ও সাবরেজিস্ট্রি অফিস তাঁর সঙ্গে জালিয়াতি করেছে। এই থানায় অভিযোগ করেছেন পুলক চন্দ্র দত্ত (৮৪) নামের এক ব্যক্তি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শেরপুর পৌর শহরের পুলক চন্দ্র দত্ত (৮৪) দত্তপাড়ায় তাঁর বাড়িতে বসবাস করেন। ছেলে দিবাকর দত্তের আর্থিক সমস্যার কারণে বাড়িটি পূবালী ব্যাংক শেরপুর শাখায় বন্ধক রেখে ২০ লাখ টাকা ঋণ নেন। ২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি বন্ধকি দলিল নিবন্ধিত হয়েছে শেরপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে।

নিয়ম অনুযায়ী বন্ধকি দলিলসহ ওই বাড়ির সকল মূল কাগজপত্র ব্যাংকের কাছে আছে। কিন্তু একই বছর ৩ জুলাই প্রতিবেশী আকাশ দত্তের কাছে বাড়িটি বিক্রি করেন পুলক দত্ত। ক্রেতা আকাশ দত্ত নামজারিও সম্পন্ন করেছেন। জানতে পেরে গত ২২ অক্টোবর নামজারি বাতিল করার জন্য শেরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পূবালী ব্যাংক পিএলসি শেরপুর শাখার ব্যবস্থাপক হুমায়ুন কবীর তালুকদার।

হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী জমিটির বন্ধকি দলিল নিবন্ধ করা হয়েছে। আমাদের কাছে জমির মূল কাগজ থাকা সত্ত্বেও, কীভাবে বিক্রয় নিবন্ধন করা হয়েছে তা বোধগম্য নয়। আমরা জমির নামজারি ও দলিল বাতিলের জন্য এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
 
তবে জমি বিক্রির কথা অস্বীকার করেছেন পুলক দত্ত। তিনি জানান, তার ছেলে ২০২২ সালে আকাশ দত্তের কাছ থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি নিজের ও ছেলের স্বাক্ষরিত ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংকের চেক, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং ছবি জমা দিয়েছেন।

এরপর পুলক দত্ত আকাশের কাছে আবারও টাকা ধার চান। টাকা ধার দেওয়ার কথা বলে আকাশ তাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর তাকে একজন দলিল লেখকের ঘরে বসিয়ে কিছু স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। কয়েক দিন পর তিনি জানতে পারেন-আকাশ দত্ত তাঁর কাছ থেকে ৩২ লাখ টাকায় বাড়ি কিনে নিয়েছেন।

এই জালিয়াতির প্রতিকার ও স্বাক্ষরিত স্ট্যাম্প ও ব্যাংকের চেক ফেরত চেয়ে গত ১৭ মে পুলক দত্ত থানায় অভিযোগ করেছেন।

পুলক দত্ত বলেন, ‘আমার কাছ থেকে বিভিন্ন জায়গায় স্বাক্ষর নেওয়া হলেও বাড়ি বিক্রির কথা বলা হয়নি। কিছুদিন পরে আকাশ আমাকে কিছু টাকা দিয়ে জানায়, সে আমার কাছ থেকে বাড়ি কিনে নিয়েছে। সে আমার ছেলের ব্যাংক লোন পরিশোধের কথাও বলেছিল। কিন্তু এখনো করেনি। এখন ব্যাংক বাড়ি নিলামে বিক্রির কথা বলছে। সাবরেজিস্ট্রার, দলিল লেখক ও আকাশ দত্ত আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আকাশ দত্ত বলেন, ‘আমি সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেই জমিটি কিনেছি।’

ব্যাংকে বন্ধকি জমির দলিল নিবন্ধনের বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসএম রেজাউল করিম বলেন, ‘সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের ৫৩ (ঘ) ধারা অনুযায়ী ব্যাংকে বন্ধকি সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য নয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই জমিটির নামজারি বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান আছে।’

বগুড়া রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ব্যাংকে বন্ধক রাখা সম্পত্তির বিক্রয় দলিল নিবন্ধন করা বেআইনি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’