পদ্মার চরে প্রতিটি বাড়ি যেন গরুর খামার

চর থেকে গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন এক কৃষক। সম্প্রতি বাঘার চকরাজাপুর গ্রামে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বাঘা: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর চরে প্রতিটি বাড়িতে গরু পালন করা হয়। প্রতিটি বাড়ি যেন গরুর খামারে পরিণত হয়েছে।

পদ্মার মধ্যে ১৫টি চরের আয়তন ৪৬ কিলোমিটার। জনসংখ্যা রয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার। জমির পরিমাণ ৬ হাজার একর। পতিত জমি রয়েছে ১ হাজার ২০০ একর। চরে প্রত্যেক পরিবারে সর্বনিম্ন ২টা থেকে ২০টি পর্যন্ত গরু রয়েছে। তারা সকাল হলেই পাল বেঁধে পতিত জমিতে গরু চরান।

এই গরু তারা রাজশাহী সিটি হাট, রুস্তমপুর হাট, কাকন হাট, তেবাড়িয়া হাট থেকে ক্রয় করে নিয়ে আসেন। তারা একটি গরু ৯-১০ মাস লালন পালন করে কোরবানির ঈদের এক মাস আগে প্রস্তুত করেন। গরুপ্রতি খরচ হয় প্রায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা।

তারা অনেকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনে পালন করেন। তারা নেপালি, অস্ট্রেলিয়ান, ফিজিয়ান, হরিয়ানাসহ নানা জাতের গরু পালন করেন। গরু পালনে লাভজনক হওয়ায় বসতবাড়িতে এগুলো পালন করা তাদের প্রধান কাজ।

সারা বছর গরু পালনের পর কোরবানির ঈদের আগে কাঙ্ক্ষিত বিক্রির সময়। কোরবানির চাহিদা লক্ষ্য করেই শেষ মুহূর্তে পরিচর্যায় ব্যস্ত। তবে স্বপ্নের গরু বিক্রির টাকায় মিটবে পরিবারের চাহিদা। এছাড়া বাড়তি অর্থ দিয়ে আবারও নতুন গরু কেনার লক্ষ্য রয়েছে প্রতিটি পরিবারের।

পদ্মার মধ্যে কালিদাসখালী চরের গরু পালনকারী আসলাম উদ্দিন বলেন, চরের একেকটি বাড়ি যেন একেকটি খামার। পরিবার প্রধান নারী-পুরুষ মিলে গরুর পরিচর্যা করে। গরুগুলো পরম যত্নে নিজের সন্তানের মতই আদর করা হয়। এই গরুগুলো যেন বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। কোরবানির পশু হাটে নায্যমূল্য নিশ্চিত হলে তারা এবারো লাভবান হবেন।

সোহেল রানা স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি গরু ক্রয় করে পালন করছেন। যে খরচ হয়েছে, সেটা বাদ দিয়ে গরু বিক্রি করা হলেও বেশ কিছু টাকা লাভ হবে। এবার গরুর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। গরু বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবেন তিনি।

আবদুল মান্নান বলেন, গত কোরবানির পর ৮০ হাজার টাকা দিয়ে দুটি বাছুর গরু কেনা হয়। লালন পালনে খরচ গেছে ৩০ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে গরুটির দাম উঠেছে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা। তাই তিনি সরকারিভাবে গরু পালনকারীদের জন্য প্রণোদনা দাবি করেন।

গুলবার আলী ঈদকে সামনে রেখে ৩টি গরু প্রস্তুত করেছেন। খাদ্যসহ উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে ব্যয় বেড়েছে। এবার ক্রেতারা আসতে শুরু করেছে। বেপারিরা চরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর দাম করে বায়না করছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, অ্যাপসের মাধ্যমে ঈদের দেড়-দুই সপ্তাহ আগে থেকে বেচাকেনা শুরু হবে। আশা করছি কোরবানির পশু কিনবেন ক্রেতারা। প্রতিটি গরু-মহিষ পালনকারীদের প্রত্যয়ন দেওয়া হয়। তারা যেন ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ নিতে পারেন।